আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডেঙ্গু মশার ভাগাড়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ
সারাদেশে যখন চলছে ডেঙ্গু মহামারি এবং তা নিধনের ব্যাপক প্রচেষ্টা তখন বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো একটি স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকায় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেল, ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। বিষয়টি যেমন দৃষ্টিকটু তেমনি দুঃখজন। কারন যেখানে দেশী-বিদেশী যাত্রী ও পর্যটকেরা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন।
বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী প্রশাসনিক সহযোগিতায় সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশকে উপেক্ষা করে অবৈধ দোকানপাট ও ভাতের বাটির রমরমা ব্যবসা বিমানবন্দরের পরিবেশকে করছে অপরিচ্ছন্ন আর ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে সেখানে পড়ে আছে ডাবের খোসা, ভাতের বাটি, ময়লা আবর্জনা। ডাবের খোসা ও ভাতের বাটির ভেতরে জমে রয়েছে স্বচ্ছ পানি, যেখানে ডেঙ্গুবাহী মশারা ডিম পাড়ে অবাধে আর রোগ বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
জনমনে প্রশ্ন, বিমানবন্দরের মতো এমন সুশৃঙ্খল পরিবেশে অপরিচ্ছন্নতা ময়লা আবর্জনা আমাদের নোংড়া মনের পরিচায়ক। যা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম করছে বিনষ্ট। বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)। সকল যাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিয়মিত সার্চ করে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে ভেতরে। এপিবিএন এর সার্চের আওতায় বিমানের সকল স্টাফ ও সাধারন মানুষ। ভেতরে বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের রয়েছে দক্ষ পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এতবেশী সরকারি বেসরকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার পরও কেন যেখানে সেখানে ময়লার ভাগাড় সেটাই সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুললেও টনক নড়েনা উর্ধতন কতৃপক্ষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউজ ও তার আশেপাশে বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ। বিদেশের মাটিতে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্হান সমৃদ্ধশালী করছে তাদের পাঠানো বিভিন্ন সামগ্রী এয়ারপোর্ট হতে বের করতে কাজ করছে সি এন্ড এফ। সি এন্ড এফ এর কাজের গতি বাড়ানো ও আরো ডিজিটাল করতে সরকার নির্মাণ করেছে নতুন বহুতল ভবন। কিন্তু সেখানে ও তার আশেপাশে দেখা যায়, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ। বাটিতে বিক্রিত খাবার খেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের খাবার বক্স বা বাটি। এ বিষয়ে বলার কেউ নেই।দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে আমরা এতটাই উদাসীন- এটা তারই নামান্তর।
কাস্টমস্ হাউজের মূল গেটে রয়েছে আনসার বাহিনীর চেকপোস্ট। আনসারের লোকজন এখানে কার্ড প্রদর্শন পূর্বক কাস্টমস্ হাউজে ঢুকতে দিচ্ছে সবাইকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়- এই কাস্টমস্ হাউজের ভেতরেই চলছে ভাতের বাটি ও দোকানের রমরমা ব্যবসা। যেখানে কাস্টমস্ সংশ্লিষ্ট লোক ছাড়া অন্যকেউ ঢোকার অনুমতি নেই। সেখানে শতশত ভাতের বাটিসহ ব্যবসায়ীরা কিভাবে ঢুকছে? আর ফেরার পথে এসব বাটিতে তারা কি নিয়ে ফিরছে- বিষয়টি ভাবা দরকার প্রসাশনসহ উর্ধতন কতৃপক্ষের। কাস্টমস্ হাউজের ভেতরে ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুল কিংবা ইটের দেয়ালের উপর বসে খোলা আকাশের নীচে খোলা খাবার খাচ্ছে মানুষজন। বিষয়টি বিচিত্র বটে! প্লাস্টিকের বড় বোতলে ডাল, ভাতের বাটিতে তরকারি ও প্লাস্টিকের ড্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে পানি। লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা ইটের দেয়ালের উপর বসে খোলা খাবার খাচ্ছে মানুষজন। এটা কতটুকু স্বাস্থ্যকর আর এসব খাবার ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে কে? এই অবৈধ খাবারের ব্যবসায় লাভবান হচ্ছে কে? সেটাই বিবেচ্য বিষয়! আর এতসব নোংড়া ময়লার জন্য দায়ী কে? এর দায়ভার কি সিভিল অ্যাভিয়েশন এড়াতে পারে?
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা যেন না থাকে সে বিষয়ে বাংলাদেশ বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও বিমান মন্ত্রণালয়সহ সকলের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মানের একটি শক্তিশালী জায়গাকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত এই বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দেশ-বিদেশের সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম ও মান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সামান্য লোভে না পড়ে বিমানবন্দরের নষ্ট না করে একটি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলের কাজ করা উচিত বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল। তারা এয়ারপোর্টের পরিবেশ সুন্দর রাখতে সুষ্ঠু শৃঙ্খলিত ব্যবস্হাপণার জোর দাবী জানান। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, বিমান মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি দেয়া ও যাবতীয় সুব্যবস্হা গ্রহণ এখন সময়ের দাবী।