পৌর কর্মকর্তাদের কর্মসূচি পালনে চরম দূর্ভোগে ঝালকাঠির নগরবাসী

দীর্ঘ টানা ১১ দিন ধরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান অবস্থান কর্মসূচির কারনে ঝালকাঠি পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী।

ঢাকা সহ সারাদেশে পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝালকাঠি পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একমত পোষনে দীর্ঘ ১১দিন ধরে নাগরিকরা হচ্ছে চরম ভোগান্তির শিকার একদিকে যেমন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পরে আছে জমে থাকা ময়লার স্তুপ, পয়োনিস্কাশনেও হয়েছে দূরাবস্থার সৃষ্টি তেমনি অপরদিকে জন্মনিবন্ধন সনদ, শিশুর টিকা নিতে আসা অভিভাবকরা পড়ছেন বিপাকে।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকায় টানা ১১দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঝালকাঠি পৌরসভার ৪০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা ঢাকায় অবস্থান করায় ঝালকাঠি পৌরসভার সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে পৌরবাসী নাগরিক সেবাসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঝালকাঠি পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, পৌর ভবনের সামনে ময়লা-আবর্জনার গাড়িগুলো সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা। পৌর মেয়র ও কয়েকজন কাউন্সিলর অফিসে থাকলেও অন্য সকল শাখার কক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। এসময় নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স করাতে আসা লোকজন কক্ষগুলো তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার পানির বিল পরিশোধ করতে এসে কাউকে না পেয়ে চলে যাচ্ছেন।

এ বিষয় শিশু সন্তানকে টিকা দিতে আসা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিলি বেগম জানান, তাঁর শিশু সন্তান নিয়ে পৌরসভায় টিকা দিতে আসলে টিকা প্রদানের কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকায় তিনি হতাশ হয়ে কাউকে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলেন এমন সময় তিনি জানান, আমার এক বছরের ছেলেকে টিকা প্রদানের জন্য এসেছি। এখন দেখছি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ নেই। এদিকে টিকা দানের সময়ও চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমি মারাত্মক সমস্যায় ভুগছি।

ব্যবসায়িক লাইসেন্স নবায়ন করতে আসা কামাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, আমি লাইসেন্স নবায়ন করতে এসেছি, কিন্তু পৌরসভায় কেউ না থাকায় নবায়ন করতে পারিনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঢাকায় আছেন, কবে আসবে তাও জানি না। আমার লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় কোন কাজ করতে পারছি না। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে হলে নাগরিক সনদপত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নাগরিক সনদপত্র না পাওয়ায়, জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে পারছি না।

শহরের ডাক্তারপট্টি এলাকার মো. মিলন বলেন, রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। ১১দিনে পৌরসভার কোন কর্মচারীকে এগুলো পরিস্কার করতে দেখিনি। এখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, তারা ঢাকায় কর্মসূচি পালন করছেন। পৌরসভার কর্মচারীরা শহরের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ না করায় বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তুপ জমে আছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পৌরবাসী। অনেক স্থানে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আর আমারা নগরবাসী ছরিয়ে পড়া দুর্গন্ধ সহ্য করছি।

এ বিষয় ঢাকায় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করা ঝালকাঠি পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারী বলেন, আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে ফিরবো না। পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সরকার যদি দাবি মেনে নেয়, তাহলে আমরা ঘরে ফিরে আসবো।

অপরদিকে ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক। আমাদের পৌরসভা থেকে ৪০জন স্টাফ ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচী পালনের জন্য গেছেন। এজন্য সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।

মোঃ আল-আমিন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি