সীমান্ত স্কয়ারে ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে দৌড়ে পালালো ২৪ দোকানের মালিক

র‍্যাব, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে দৌড়ে পালিয়ে গেলো রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারের ফুডকোর্টের ২৪ দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা। রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারের ৭ তলার ফুডকোর্টে মোট ৩০টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ দোকানেই মানসম্মতভাবে খাবার খাবার পরিবেশন করা হচ্ছিলো না।

সোমবার রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে রং মেশানো ছয় মন গরুর মাংস জব্দ করে র‍্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারনার অভিযোগে তিনজন মাংস বিক্রেতাকে আটক করার পাশাপাশি দুটি দোকানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সোমবার দুপুরে ওই অভিযানের পর র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ধানমণ্ডি এলাকার সীমান্ত স্কয়ারের ৭ তলার ফুডকোর্টে অভিযান চালান। ফুটকোর্টে র‍্যাবের অভিযান দেখে দোকানের সাটার নামিয়ে পালিয়ে যান ২৪টি দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা।

পরে দোকানগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ফুডকোর্টের ৫টি দোকান মালিককে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নিউ মার্কেটে গরুর মাংসে ক্ষতিকর রং মেশানো ও বিক্রির বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, জব্দকৃত মাংসগুলো দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজে মজুদ রাখায় ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিলো। আর এ কারণে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে টাটকা দেখিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছিলো প্রতারক ব্যবসায়ীরা। ওই মাংস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অভিযানের সময় মাংসের দোকানের জারে রং মিশ্রিত পানি ও ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে তাতে রং মিশিয়ে রক্ত বর্ণে পরিণত করা হচ্ছে জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ক্রেতারা এসব বাসি মাংস টাটকা ভেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা মহিষের মাংস টুকরো করে গরুর মাংস বলেও বিক্রি করছে তারা। এ ঘটনায় ছয় মণ মাংস জব্দ ও দুটি দোকানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নিউ মার্কেটের ওই অভিযানের পর বিকালে র‍্যাব সদস্যদের নিয়ে সীমান্ত স্কয়ারে অভিযান চালান ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

অভিযানের সময় যেসব কাস্টমার সেখানে খাবার খাচ্ছিলেন তাদের খাওয়া শেষে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে পুরো ফুডকোর্টটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অভিযান চালান র‍্যাব সদস্যরা। অভিযানের সময় বিল্লা স্পাইসি ফুড, মায়সা ইতালিয়ান ফুড, ফোরমোসা কিউ কিউ, ইট ওয়ে এবং ইট প্লেট নামের ৫টি দোকান খোলা ছিল। বাকি ২৫টি দোকান বন্ধ পায় র‍্যাব। খোলা থাকা পাঁচ দোকানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত দেখতে পায় সেখানে স্পাইসি চিকেনে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয় এমন রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি দোকানের রান্নাঘরে ছিলো তেলাপোকা। খাবার তৈরির জায়গা ছিলো ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। অভিযানে বিল্লা স্পাইসি ফুডকে ৪০ হাজার, মায়সা ইতালিয়ান ফুডকে ৫০ হাজার, ফোরমোসা কিউ কিউকে ২৫ হাজার, ইট ওয়েকে ৫০ হাজার এবং ইট প্লেটকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এখানে অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ফুডকোর্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, দোকানের সাটার বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া দোকানগুলো পরবর্তী অভিযান চালানোর আগে খোলা যাবে না। এ কথা শুনে কফি লাইম নামে এক দোকানের মালিক ম্যাজিস্ট্রেটকে তার দোকানে নিয়ে যান। পরে দোকানটি পরিচ্ছন্ন থাকায় তাকে আর কোনো জরিমানা করা হয়নি।

তবে সাটার বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া বাকি ২৪টি দোকান বন্ধ রাখার আদেশ সীমান্ত স্কয়ার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

অভিযান সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আমরা দোকানগুলো বন্ধ রাখতে সীমান্ত স্কয়ার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। সীমান্ত স্কয়ার কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।