র‍্যাবের হাতে মানবপাচারের ১০ থেকে ১৫টি চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য!

সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে অন্তত ৩৯ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে মানবপাচারে জড়িত অন্তত ১০ থেকে ১৫টি চক্রের তথ্য পেয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

লিবিয়ার ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ১৪ জন। এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে বাংলাদেশ থেকে নৌপথে মানবপাচারের বিষয়টি। এবার পাঁচ থেকে ছয়টি চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া বাংলাদেশিরা সেদিন নৌ-দুর্ঘটনায় পতিত হন বলে জানা গেছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, মানবপাচারের এ চক্রে সাত থেকে আট লাখ টাকার অর্থের বিনিময়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে দুই মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। দেশজুড়ে চক্রের সদস্যরা ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে লোক সংগ্রহ করে। তারপর সেসব লোকদের সড়ক-বিমানপথ মিলিয়ে তিনটি রুটে লিবিয়ায় পাঠায়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনিসিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাঠায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইটি পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে র‍্যাব-১। আটককৃতরা হলেন- আক্কাস মাতুব্বর (৩৯), এনামুল হক তালুকদার (৪৬) ও আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া (৩৪)।

তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তারা প্রথমে বিদেশে গমনেচ্ছুক নির্বাচন করে, এরপরের ধাপে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া এবং সর্বশেষ ধাপে লিবিয়া থেকে তাদেরকে নৌপথে ইউরোপে পাঠানো হয়।

ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট ক্রয় এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ইউরোপে পৌঁছে দিতে তারা ৭-৮ লাখ টাকা অর্থ নির্ধারণ করে, এর মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লিবিয়ায় পৌঁছানোর আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাত্রার আগে পরিশোধ করতে হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে পাচারে তিনটি রুট ব্যবহৃত হয় জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রুটগুলো, বাংলাদেশ- তুরস্কের ইস্তাম্বুল-লিবিয়া, বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলংকা (৪-৫ দিন অবস্থান)- ইস্তাম্বুল (ট্রানজিট)- লিবিয়া এবং বাংলাদেশ-দুবাই (৭-৮ দিন অবস্থান) -আম্মান (জর্ডান) (ট্রানজিট) – বেনগাজী (লিবিয়া) – ত্রিপলী (লিবিয়া)। এক্ষেত্রে তারা সড়ক ও বিমানপথ ব্যবহার করে লিবিয়া পৌঁছাতো। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনিসিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাচার করে থাকে।