বান্দরবানে একদিনের ব্যবধানে জোড়া খুন, অপহরণ- ১
বান্দরবানে একদিনের ব্যবধানে ২ জনকে গুলি করে হত্যা ও ১ জনকে অপহরন করেছে সন্ত্রাসীরা। এমনকি মোবাইল ফোনে জেএসএস নেতাকর্মীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসী গ্রুপটি। তাই প্রাণে বাঁচতে এখন ঘর ছেড়ে আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জেএসএস নেতা-কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৯) মে রাতে কুহালং ইউনিয়নের ৩ নং রাবার বাগান এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় জয়মনি তংঞ্চগ্যা (৪৫) নামে একজন সাদাসিধে লাকড়ি ব্যবসায়ীকে এর আগে ৭ মে রাতে রাজবিলা ইউনিয়নেসর তাইং খালী এলাকায় হত্যা করা হয় বিনয় তংঞ্চগ্যা নামে জেএসএস এর এক কর্মীকে এবং একই দিন রাতে অপহরণ করা হয় পুরাধন তংঞ্চগ্যা নামে জেএসএস এর অপর এক কর্মীকে। পৃথক দুটি হত্যা ও অপহরণের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার তো দুরের কথা কে বা কারা কেন-ই বা তাদের হত্যা করেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছুই জানতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে অপহৃতকে উদ্ধারে সেনা অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এ ঘটনার পর থেকে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের চারধারে। প্রাণে বাঁচতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জেএসএস নেতাকর্মী-সমর্থকরা। এদিকে এ দুটি হত্যা কান্ডের সাথে মগবাহিনী নামে (এএলপি)র দলছুট বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত আছে বলে দাবী পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস’র।
জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলার সভাপতি উছোমং মার্মা বলেন- জনসংহতির সমিতির জেএসএসকে কোণঠাসা করতে, যাতে তারা শান্তিচুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করতে না পারে সে জন্য আমাদের নেতাকর্মী সমর্থকদেরকে হত্যা করে পাহাড়ে আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে। কে বা কারা এ হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে তা প্রশাসনের জানার কথা। কিন্তু পরপর ৪টি হত্যাকান্ড ঘটার পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হয়তো জেনেও চুপ করে আছে। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এএলপির দলছুট একটি বিচ্ছন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। তারা এখানকার স্থানীয় মার্মা যুবকদের পথভ্রষ্ট করে তাদের দলে নিয়ে স্থানীয় কিছু বড় নেতার সহযোগিতায় পাহাড়ের পরিবেশকে অশান্ত করতে জেএসএস নেতাকর্মীদের একের পর এক হত্যা করছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। প্রশাসনের কাছে এর বিচার দাবী করছি। যারা বান্দরবান পাহাড়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চক্রান্ত করছে এবং শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে জেএসএস এর নেতাকর্মীদের হুমকি, অপহরণ ও হত্যা করছে তাদেরকে শীঘ্রই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হউক। নতুবা পাহাড়ের পরিবেশ আরও খারাপের দিকে যাবে।
এদিকে গতকাল রোয়াংছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বান্দরবান জেলার জেএসএস এর সাধারণ সম্পাদক কেবামং মার্মাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি গত কয়েকদিনের হত্যাকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেইসবুকে লেখালেখি এবং সংবাদ সংম্মেলন করায় আমাকে মগ বাহিনী নামে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয় এবং আমি যাতে বেশি বাড়াবাড়ি না করি সে বিষয়ে শ্বাসায়।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গত দুই দিনের হত্যাকান্ড ও অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে বান্দরবান সদর সার্কেলের এএসপি ইয়াছির আরাফাত বলেন, দূর্গম এলাকা হওয়ায় আসামীদের গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। জেএসএস বলছে মগবাহিনী নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ হত্যা কান্ড চালাচ্ছে। কিন্তু তারা পুলিশকে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না এবং ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকেও আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। যে কারণে আমাদের নিজস্ব সোর্স এর মাধ্যমে খবর নিয়ে অভিযানে অগ্রসর হতে হচ্ছে, তাই একটু ধীর গতি হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের নিয়ে আসা হবে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় আমাদের বিশেষ সাদা পোশাকধারী টহল টিম জোরদার রয়েছে এবং এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই যাতে থানায় খবর দেয়।
প্রসঙ্গত, বৃহষ্পতিবার (৯ মে) রাতের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রনি মালা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, মুখোশ পরা অস্ত্রধারী কয়েক সন্ত্রাসী এলাকায় প্রবেশ করে রিপন তঞ্চঙ্গ্যার খোজ করে। তাকে না পেয়ে চায়ের দোকানে তার বাবা জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যা গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। অপর দিকে ৭ (মে) রাতের আধারে ঘর থেকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে। একই দিন পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা অপহরণ করা হয়। এর আগে ১৪ এপ্রিল রাজবিলায় অংক্যচিং নামে জেএসএস‘র আরেক নেতাকে হত্যা করা হয়।
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি