কলসিন্দুরের বিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তদের আগুন, প্রধানমন্ত্রী কাছে বিচার চেয়েছেন মেয়েরা

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়ার ঘটনায় কলসিন্দুরের মেয়েরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ মে) ভোরে লাগানো ওই আগুনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সনদপত্র, মেয়েদের খেলার সনদপত্র, মেডেল (পদক), রেজুলেশন বইসহ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ছাড়া একটি পেনড্রাইভও নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী মারিয়া মান্ডা ও সানজিদা, তহুরা এবং মারজিয়া, শামনুন্নাহাররা এখন জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। নিজেদের স্কুলের অফিস কক্ষ ও তাদের কস্টে অর্জিত খেলার উপহার সামগ্রী পুড়ে যাওয়ায় ভীষণ কস্ট পেয়েছেন তারা।

বুধবার (১৫ মে) দুপুরে বাফুফে ভবনের পাশে টার্ফে দাঁড়িয়ে দুই সিনিয়র খেলোয়াড় মারিয়া মান্ডা ও সানজিদা আক্তার এ ঘটনার তৃতীয় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশপাশি বিচার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

মারিয়া মান্ডা বলেছেন, আমাদের স্কুলে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। শোনার পর মন খারাপ করেছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠ বিচার হোক। তদন্ত হলে দোষীদের বের করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এর বিচার চাই। যারা এমন কাজ করেছে তাদের যেন শাস্তি দেয়া হয়।

সানজিদা আক্তার বলেছেন, সকালে নাস্তার করার সময় শুনেছি এ ঘটনা। খুব খারাপ লাগছে। আমরা ওই স্কুলে পড়েছি। ওই স্কুলের মাঠে অনেক খেলেছি। যে ব্যক্তি এমন জঘন্য কাজ করেছে তাকে সনাক্ত করে যেন শাস্তি দেয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়, রমজান উপলক্ষে স্কুল বন্ধ থাকলেও কয়েকটি বিষয়ে দুর্বল শিক্ষকদের জন্য সকালে বিশেষ ক্লাস নেন শিক্ষকরা। গতকাল ভোরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র পাল বিশেষ ক্লাস নেওয়ার জন্য স্কুলে গিয়ে অফিস কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুলের অন্য শিক্ষকরাও উপস্থিত হন। খবর পেয়ে ধোবাউড়া থানার ওসি আলী আহাম্মদ মোল্লা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিক উজজামান বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।

এ বিষয় শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র পাল বলেন, তিনি স্কুলে গেলে একটি ছেলে দোতলায় ওঠে। এরপর সে চিৎকার করে বলে, রুমে আগুন লেগেছে। তখন তিনি দ্রুত মেইন সুইচ অফ করে ওই অফিস কক্ষে যান এবং জানালা খুলে দেন। তিনি দেখেন যে বিভিন্ন আলমারি ও ড্রয়ার ভেঙে কাগজপত্র একটি বড় টেবিলে রেখে সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র আরো বলেন, মূলত বিভিন্ন শিক্ষকের সার্টিফিকেট, হাজিরা খাতা, রেজুলেশন বই এসব পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার নিজেরই সার্টিফিকেট পুড়ে গেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন মিয়া বলেন, ৬ মে থেকে বিদ্যালয়ে রমজানের ছুটি চলছে। তবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস চালু আছে। সকাল ৮টা থেকে বিশেষ ক্লাস শুরু হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিশেষ ক্লাসের জন্য যাওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আগুনের ঘটনা টের পায়। দুর্বৃত্তরা তালা ভেঙে আগুন দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। কী কারণে আগুন লাগানো হয়েছে তা তারা বুঝতে পারছেন না বলে জানান।

তবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র নিয়ে কেলেঙ্কারির দায়ে একজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে তেমন কোনো ঝামেলা নেই।

অফিস কক্ষে আগুন দিলেও বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দেয়াল টপকে অফিসে ঢুকেছে দুর্বৃত্তরা।

ধোবাউড়া থানার ওসি আলী আহাম্মদ মোল্লা বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্কুলের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন কারো নাম বলা হয়নি। পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।

এ বিষয়ে জানতে ইউএনও রাফিক উজ্জামানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিদ্যালয়ের সরকারীকরণের কাজে বাধা সৃষ্টি করার জন্যই কেউ এমন কাজ করেছে কি না সে বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে এলাকায়।

উল্লেখ্য, কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে শিক্ষার্থীরা তিনবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তি হয় ওই শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ নারী দলের কৃতী ফুটবলার মারিয়া মান্দা, মার্জিয়া ও সানজিদাসহ বয়সভিত্তিক বিভিন্ন জাতীয় দলে কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কমপক্ষে ১০ জন মেয়ে নিয়মিত খেলেন।