প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে নুরের আপত্তি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এই দুজন ছাড়া ডাকসুর বাকি সদস্যরা এ প্রস্তাবে সমর্থন দেন। শনিবার ডাকসুর কার্যকরী পর্ষদের প্রথম সভায় তাকে এই সদস্য করার প্রস্তাব করেন ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি।

প্রস্তাবে আপত্তির বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে ডাকসু, সেখানে তার মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে সদস্য করা ঠিক হবে না। তার কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন সমাজসেবা সম্পাদকও।

এ বিষয়ে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, যেখানে অধিকাংশ সদস্য মত দিয়েছেন সেখানে একজনের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যে  প্রস্তাব উঠেছে তা আমরা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবনের সদস্য করার বিষয়টি আগামী সভায় চূড়ান্ত করা হবে।

সভা শেষে ভিসি, ভিপি ও জিএস সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এ প্রস্তাব গৃহীত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনা হবেন ডাকসুর আজীবনের সদস্য হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নবনির্বাচিত কার্যকরী পর্ষদের প্রথম সভা আজ শনিবার বেলা ১১টায় ডাকসু ভবনে শুরু হয়।

সভায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানীসহ নির্বাচিত ২৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে ভিপি নূরুল হক নূর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন ডাকসুর ৩৬৫দিনের মেয়াদ শুরু হলো।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সিনেট ভবনের অডিটোরিয়ামে এ সভা হবে। কিন্তু পরে সভা হয় ডাকসুর ভবনেই।

তার আগে ডাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে গতকাল নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ডাকসু এবং ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন হয়। এতে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সব প্যানেলের ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।

নির্বাচনের দিন দুপুরে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অন্য চারটি প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ প্যানেল।

নির্বাচনে ফল ঘোষণায় ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পেছনে ফেলে ভিপি নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর।

নির্বাচন বর্জন করার পর ভিপি হিসেবে নুর দায়িত্ব নিবেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রশ্নের উত্তর নুরুল হক নুর নিজেই দেন। ১২ মার্চ পুনরায় ডাকসুর দাবিতে অনশন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে গিয়ে নুর বলেন, তিনি ভিপি পদ ও তার প্যানেল থেকে বিজয়ী আখতার হোসেনের সমাজসেবা সম্পাদক পদ বাদে ডাকসুর বাকি ২৩ পদে নির্বাচন চান। পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে নুর আন্দোলন করবেন বলে ঘোষণা দেন।

এরপর গত ১৬ মার্চ নুরসহ ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান। পরের দিন ১৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর সবগুলোপদে পুনরায় নির্বাচন চান বলে ঘোষণা দেন। নুরুল হক নুরের এমন দ্বৈতমতের কারণে ডাকসুতে তিনি দায়িত্ব নিবেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় বাড়তে থাকে। তবে গতকালের ঘোষণার পর সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো আজ।