সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ আজিজকে হারিয়ে ভারতীয় সঙ্গীতজগতে শোকের ছায়া
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ আজিজ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
মোহাম্মদ আজিজের কন্যা সানা জানান- ‘বিকাল ৩টার দিকে বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। তিনি কলকাতা থেকে মুম্বাই আসছিলেন। বাবার সাথে যারা ছিলেন তারাই আমাদের খবর দেয় যে বাবার শরীর ভাল নেই। তিনি হার্ট ব্লকেজ সমস্যায় ভুগছিলেন এবং সম্ভবত বিমানবন্দরেই তিনি মারা যান। বিমানে ওঠার আগেও তিনি খুব একটা সুস্থ অনুভব করছিলেন না, কিন্তু বাড়ি ফেরার জন্যই কলকাতা থেকে বিমানে চাপেন। কলকাতায় বেশ কয়েকটি গানের শো করেছিলেন বাবা এবং কয়েক মাস উত্তর-পূর্ব ভারতেও ছিলেন। তাঁর মরদেহ মুম্বাইয়ের কান্দিভলি ওয়েস্ট-এর বাসায় নিয়ে আসা হবে।’
১৯৫৪ সালের ২ জুলাই কলকাতায় একটি আধ্যাত্মিক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর ডাক নাম ছিল মুন্না এবং তাঁর আসল নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজ-উন-নবী। তিনি ছিলেন সঙ্গীতের একজন প্রেমিক এবং খুব শৈশব বয়স থেকেই কলকাতাতেই প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির গান গাওয়া শুরু করেন। অত্যন্ত মিষ্টি কণ্ঠ ও উচ্চমানের কণ্ঠের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
একটা সময় তাঁকে রফির উত্তরাধীকারী হিসেবেও ভাবা হতো। বলিউড, উড়িয়া এবং বাংলা চলচ্চিত্রে সফল কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ আজিজ। ‘জ্যোতি’ নামে একটি বাংলা ছবিতে গান গাওয়ার মাধ্যমে শিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ হয়। পরে এক প্রযোজকের অনুরোধে ১৯৮৪ সালে মুম্বাই আসেন তিনি। ওই বছরেই ‘অম্বর’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে গান করেন তিনি। তবে ‘মর্দ’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের গলায় ‘মর্দ টাঙ্গেওয়ালা’ গানটি গাওয়ার মাধ্যমে লাইমলাইটে চলে আসেন তিনি। বিগ বি ছাড়াও ঋষি কাপুর, গোবিন্দা, মিঠুন চক্রবর্তীসহ বলিউডের শীর্ষ নায়কদের কণ্ঠে গান গেয়েছেন তিনি। লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, অনুরাধা পাড়োয়াল, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির মতো নারী কণ্ঠ শিল্পীদের সাথে আজিজের ডুয়েট গান এখনও সমান জনপ্রিয়। ভারতের ১০ বিভিন্ন ভাষায় কমপক্ষে প্রায় বিশ হাজার গান গেয়েছেন মোহাম্মদ আজিজ। সেই সাথে অসংখ্যা ভক্তিগীতি, সুফি, ভজন গানও রয়েছে তার কণ্ঠে।
উল্লেখ্য, সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের কারণে দুই বার সেরা পুরুষ কণ্ঠ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় সঙ্গীতজগতে।