জনগণের সত্যিকারর মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়তে হবেঃ ফখরুল

বৃহস্পতিবার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্য প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, তা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নীল নকশার’ ফসল। এবারও পরিস্থিতি সেই রকম। 

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমি এখানে দাঁড়িয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও সকল গণতান্ত্রিকগামী মানুষের কাছে আহ্বান রাখতে চাই, আসুন আমরা একটা প্রশ্নে একমত হই। তাহলে কেন এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আবার ওই জায়গায় (নির্দলীয় সরকার) এসে এক হচ্ছেন না– এটা জনগণের সামনে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।… একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চাই। এ বিষয়টাতে একটা জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে বিএনপি ও সমমনারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তাদের মেয়াদ পূর্ণ হলে এ বছরের শেষ নাগাদ হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

ফখরুল বলেন, “আজ সকল অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডি বলছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বিকলাঙ্গ একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রকৃত আয় বলতে কিছু নাই মানুষের। কর্মসংস্থান নাই। আর বলছেন শনৈ শনৈ উন্নতি!”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়ার তাগিদ দিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, “এ অবস্থা থেকে অবশ্যই আমাদের মুক্তি পেতে হবে। এই মুক্তির পথ একমাত্র জনগণ। জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জনগণকে নিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

ফখরুলের ভাষায়, কেবল খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নয়, দেশের মানুষের ‘সত্যিকারর মুক্তির জন্য’ এই আন্দোলন গড়ে ‍তুলতে হবে। দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাগ করে বললেন, এই করছে, ওই করছে ঠিক আছে- এই কোটা পদ্ধতি তুলে দিলাম। এটা তিনি করতে পারেন না, তার সেই অধিকার নেই।  তার এই ঘোষণা সংবিধানের বাইরে। শিক্ষার্থীরা তা চায়নি, তারা চেয়েছিল সংস্কার, অর্থাৎ পরিবর্তন করা।

“উনি (প্রধানমন্ত্রী) জানেন যে, এটা যেটা উনি করছেন তা আদালতে গেলে চ্যালেঞ্জে পড়বে। ফলে এখন পর্যন্ত গেজেট হয়নি, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।” তবে বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরনের আন্দোলনে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ করা যাবে না বলেই মনে করেন মির্জা ফখরুল।

“অধিকার আদায়ের জন্য একটা শ্রেণির বা ছাত্র-ছাত্রীদের যে আন্দোলন, তাতে কিন্তু কোনো লাভ হবে না, যদি না পুরো সিস্টেম নিয়ে আন্দোলন করা হয়, যদি না গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করা হয়, পুরো অধিকারের জন্য আন্দোলনটা করা হয়। জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকলেই তো সেই সরকার জনগণের কথা চিন্তা করবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা দেশনেত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই একটি মানুষ আছেন, যাকে কেন্দ্র করে এদেশের গণতন্ত্রের মানুষরা বেঁচে আছেন। এই একটি মানুষ আছেন যাকে কেন্দ্র করে তার দিকে তাঁকিয়ে মানুষ বেঁচে আছেন। আজ তিনি অসুস্থ। “আমাদেরকে অবিলম্বে যেটা তার পাওনা সেই মুক্তির জন্য জোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনতে হবে।”

অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আনহ আখতার হোসেইন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, সাংবাদিক নেতা সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, এ্যাবের আলমগীর হাছিন, রিয়াজুর রহমান রিজু, শামীমুর রহমান শামীম বক্তব্য দেন।