রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি মোতায়েন

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে শুক্রবারের সশস্ত্র হামলার পর সেখানকার রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিজিবি উখিয়া এবং টেকনাফ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া মোট ৯১জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

এদিকে, বান্দরবানের তমব্রুতে প্রায় হাজার খানেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি এবং কক্সবাজারের কুতুপালং ও পালংখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য জড়ো হয়েছেন বহু রোহিঙ্গা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া প্রায় হাজার খানেক রোহিঙ্গার একজন দীন মোহাম্মদ। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ডেকিবুনিয়া গ্রামে বাড়ী। পরিবারের আটজন সদস্যকে নিয়ে আজ সকালে পৌছেছেন বাংলাদেশ সীমান্তে। বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, নিজের দেশের সহিংস পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছেন তিনি।

“আমাদের দেশে দিনে চারবার পাঁচবার করে গোলাগুলি চলতেছে। সেকারণে ছোট একটা খাল পার হয়ে আসছি আমরা। বাংলাদেশ সরকারকে আশ্রয় দেবার জন্য অনুরোধ করব। আমাদের দেশে পরিস্থিতি ভালো হলে চলে যাব।”

তিনি জানিয়েছেন, তার গ্রামের অন্তত আরো দুইশত রোহিঙ্গা পরিবার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে গত দুই দিনে। এদিকে শুধু বান্দরবান নয়, কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশের পর শুক্রবার থেকে নাফ নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে প্রায় হাজার মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিক বলছিলেন, সেখানে অপেক্ষমান মানুষদের ঘিরে রেখেছে বিজিবি।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি মোতায়েন

“এখানে জলপাইতলী এটাকে শূন্যরেখা বলে, এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ অবস্থান নিয়েছে, আর তাদেরকে বিজিবি কর্ডন করে রেখেছে। এবং আমাদের উল্টোদিকে মিয়ানমার সীমান্তে আরো মানুষ জড়ো হয়ে রয়েছে।”

“আজ থেকে তিনদিন ধরে জড়ো হওয়া মানুষেরা এখানে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছে। আশেপাশের গ্রামের মানুষেরা কিছু ক্ষেত্রে তাদের আত্মীয়স্বজনেরা খাবার দাবারের ব্যবস্থা করছে।”

এদিকে, শনিবার মধ্যরাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত বিজিবি উখিয়া এবং টেকনাফ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া মোট ৯১জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

টেকনাফের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলছিলেন, কক্সবাজারের নাফ নদীর দমদমিয়া ও শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় টেকনাফ থেকে মোট ২০জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছেন তারা।

“আমরা প্রতিদিন ওপারে ফায়ারিং সাউন্ড শুনছি, এবং এপাশ থেকে আমরা ধোঁয়া দেখছি। এটার আউটকাম হিসেবে ওপাশ থেকে রোহিঙ্গারা আসার চেষ্টা করছে। তারা দুশো থেকে পাঁচশো বা সাতশোজন করে জড়ো হয়ে থাকে। যখন একটু ফ্রি হয়, তারা ফেরত চলে যায়।”

“আমরা যতদূর পারছি, তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। টেকনাফ থেকে এ পর্যণ্ত ২০জনকে ফেরত পাঠিয়েছি। এর বাইরে আমরা এসব এলাকায় জনবল বাড়িয়েছি” বলছিলেন বিজিবি অধিনায়ক।

একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কয়েকশ রোহিঙ্গা ঘুনধুম,তমব্রু ও রেজু মঞ্জয় পাড়ায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন সীমান্তের ওপারে ওয়ালিডং ও বিকুবুনিয়ার জঙ্গলে এবং সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু ও ঘুনধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেন।