যুক্তরাজ্যে দূতাবাসে হামলা, ব্রিটিশ সরকারের দিকে তাকিয়ে আ.লীগ

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির একাধিক নীতি নির্ধারণী নেতা মনে করছেন দূতাবাসে হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখা সে দেশের সরকারের বিষয়। ঘটনাটি নিন্দনীয়। জড়িতদের বিচারে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত ও তাদের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়। তবে হামলার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ও ‘অনভিপ্রেত’ উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। এদিকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ওই হামলার ‘নির্দেশদাতা’ বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

হামলার পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একটি মামলার রায়কে (খালেদা জিয়ার রায়) কেন্দ্র করে দূতাবাসে যে হামলা হয়েছে, সেটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, ওই হামলার নির্দেশদাতা লন্ডনে অবস্থানরত দীর্ঘদিন ধরে পলাতক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার পরিকল্পনাতেই এ হামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলকে জানানো হয়েছে।’

এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির অবমাননা এবং হাইকমিশনে আক্রমণের ঘটনার নির্দেশদাতা ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্যের সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাইকমিশন বলে, ‘প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল স্মারকলিপি প্রদানের অজুহাতে কারো নির্দেশে পূর্ব-পরিকল্পিত একটি হামলা।’

বিষয়টির নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি নির্ধারণী নেতা বলছেন, দূতাবাসে হামলার ঘটনাটি খতিয়ে দেখা সে দেশের সরকারের বিষয়। লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে এটি নিন্দনীয়। আমরা মনে করি, এটি বাংলাদেশের উপর হামলা। বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারে আমরা সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, হাইকমিশনে হামলার ঘটনা শুধু আমাদের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের কাছে কেন সবার কাছেই রাজনৈতিক হিসেবে মনে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ব্রিটিশ সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়। তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে যে, কোনো দেশে স্থাপিত দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের। আর এ নিরাপত্তা ভেঙে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যে হামলা হয়েছে, বিষয়ে সে দেশের সরকারেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আমাদের যদি কোনো জায়গায় দূতাবাসে আক্রমণ হয় সেখানে তো দেশের উপর আক্রমণের মতো। এখানে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অভিযোগ গেছে। কারা করেছে? এটা তদন্ত করে দেখবে ব্রিটিশ সরকার। আমরা এটার বিচার দাবি করছি। কারা এটাতে জড়িত ছিল তাদের সবার শাস্তি হবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ভাঙা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি থেকে তারেক রহমান গত ৯ বছর ধরে লন্ডনে বসে শত কোটি টাকা ব্যয় করে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছে। বিদেশের আদালতে মানি লন্ডারিং মামলায় তার ৭ বছর সাজা হয়েছিল। সেই তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাসের উপর তার দস্যুবাহিনী দিয়ে হামলা করেছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ যার দ্বারা লন্ডনের দূতাবাসে হামলা হয়েছে। যার নেতৃত্বে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। সেই তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন। এটা আজ বাংলাদেশের জনগণের দাবি।