পিছিয়েছে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের রিট আবেদনের শুনানি

আইনজীবীদের মধ্যে থেকে আপিল বিভাগে সরাসরি বিচারক নিয়োগ এবং প্রধান বিচারপতির শূন্য পদে নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনের শুনানি সাত দিন পিছিয়ে গেছে। রোববার রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি আগামী রোববার শুনানির জন্য রেখেছে।

আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের ওই রিট আবেদন এর আগে হাই কোর্টের চারটি বেঞ্চ প্রত্যাখ্যাত হয়। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তা গ্রহণ করে রোববার শুনানির জন্য রাখে। আদালতের রোববারের কার্যতালিকার ৮ নম্বর ক্রমিকে ছিল মামলাটি। ক্রম অনুযায়ী তা শুনানির জন্য এলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রস্তুতির জন্য সাত দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন।

আদালত এ সময় রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের কাছে জানতে চায়- রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে নিয়ে তার আপত্তি আছে কিনা। ইউনুছ আলী ‘আপত্তি নেই’ জানালে আদালত মামলাটি আগামী রোববার শুনানির জন্য রাখে। পরে ইউনুছ আলী বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল প্রস্তুতির জন্য সাত দিনের সময় আবেদন করেছিলেন। আদালত আগামী রোববার শুনানির জন্য রেখেছেন।”

প্রধান বিচারপতির শূন্যপদে নিয়োগ এবং আইনজীবীদের মধ্যে থেকে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতি পদে সরাসরি নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে এর আগে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন আইনজীবী ইউনুছ আলী। তাতে সাড়া না পেয়ে তিনি এই রিট আবেদন করেন।

প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকা এবং নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল চাওয়া হয়েছে সেখানে। সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর গত ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার হাতে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দিলেও গত প্রায় আড়াই মাসে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

ইউনুছ আলী বলছেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কারও ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত আইনজীবীদের মধ্য থেকে আপিল বিভাগে সরাসরি কোনো বিচারক বা প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

“হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ৮০ শতাংশের বেশি নিয়োগ আইনজীবীদের মধ্যে থেকে হলেও তাদের কেউ সরাসরি নিয়োগ পাননি।” এভাবে নিয়োগের ফলে আইনজীবীদের সঙ্গে ‘বৈষম্য’ করা হয়েছে এবং সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারকে ‘খর্ব’ করা হয়েছে বলে মনে করেন ইউনুছ আলী।

সরকারকে উকিল নোটিস পাঠানোর সময় তিনি বলেছিলেন, “হাই কোর্ট বিভাগ থেকেই আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে কিংবা পদোন্নতি দিয়ে আপিলে নিয়ে যেতে হবে- এমন কোনো বিধান আমাদের সংবিধানে নেই। অথচ আপিল বিভাগে শতভাগ বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে হাই কোর্ট থেকে।

“এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাকে চারবার শপথ নিতে হচ্ছে। অর্থাৎ একই ব্যক্তি পরপর চারটি পদ হোল্ড করেন। অথচ সাংবিধানিক বিধান থাকার পরও আইনজীবীদের মধ্যে থেকে আপিলে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।”

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশর সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,

১. প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দেবেন।

২. সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে অন্যূন দশ বছর ওকালতির অভিজ্ঞতা না থাকলে অথবা কমপক্ষে দশ বছর বিচার বিভাগীয় কোনো পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে অথবা আইন দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারক পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

বাংলাদেশে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ঠিক করে কোনো আইন করা হয়নি, সেহেতু এ পর্যন্ত প্রথম দুই শর্তের মধ্যে একটির নিরিখেই হাই কোর্টে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।