মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল আল আমিনকে

রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেকে একটি বাসায় গত শনিবার রাতে খুন হন ১২ বছরের গৃহকর্মী আল আমিন। সোমবার ১৬৪ ধারায় আদালতে আসামিরা জবানবন্দী দিয়েছেন। আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ গৃহকর্তা শেখ জোবায়ের আলম, গৃহকর্ত্রী সাইয়্যেদা রহমান, শ্যালক সাকিব আহমেদকে গ্রেফতার করে।

আসামীরা ঘটনায় দায় স্বীকার করে বলেছেন, ছয় মাস ধরে কিশোর আল আমিনের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন তারা। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি এই ছয় মাসে। ঘর থেকে একবারের জন্যও বের হতে দেননি। সারাদিন কাজের বিনিময়ে এক বেলা পচা খাবার দিতেন। কাজ শেষে আল আমিন থাকতো বাসার টয়লেটে। ভুল হলেই লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আল আমিনকে আহত করা হতো।

এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন আল আমিনের চাচা হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, ময়মনসিংহের বাঘাডুবার শিমুলিয়াপাড়ার দরিদ্র কৃষক রুহুল আমিনের চার সন্তানের মধ্যে বড় আল আমিন। অভাবের তাড়নায় ঢাকার এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজে তাকে দিয়েছিলেন তার বাবা। জোবায়ের ও সাইয়্যেদা দম্পতির সন্তানের দেখাশোনা করার জন্য আল আমিনকে নেয়া হয়। চাচাতো ভাই মানিক মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে আল আমিনকে ওই বাসায় কাজে দেন। নানা অজুহাতে দিনভর সাইয়্যেদা আল আমিনকে নির্যাতন করতেন। গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসায়ী জোবায়ের ফিরলে সাইয়্যেদা নানা অভিযোগ দিতেন। স্ত্রীকে খুশি রাখতে তিনি রড দিয়ে আল আমিনকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে টয়লেটে রেখে আসতেন। কখনও মাথায় তুলে আছাড় মারতেন। এসব দেখে তার স্ত্রী সাইয়্যেদা ‘আনন্দ’ পেতেন।

আদাবর থানার অপারেশন অফিসার সুজিত সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, আল আমিনের শরীরের সর্বত্র ক্ষতচিহ্ন ছিল। তাকে দেখে মনে হয়েছে একটি কঙ্কালের ওপর চামড়া লাগিয়ে রাখা হয়েছে। এই কঙ্কালসার দেহের ওপর এমন অত্যাচার কল্পনাও করা যায় না। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান মনি জানান, তিন মাস আগে আল আমিনের ডায়রিয়া হয়। তখন তাকে টয়লেটে থাকার স্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়। রাত ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তাকে টয়লেটে থাকতে হতো।

আল আমিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়

শনিবার সকালে আল আমিনকে একদফা রড দিয়ে পেটান সাইয়্যেদা। সন্ধ্যার পর জোবায়ের ও সাইয়্যেদা মিলে আবার পিটিয়ে আহত করেন। রাত ৮টার দিকে বাচ্চার দুধের ফিডার হাত থেকে পড়ে গেলে সাইয়্যেদা চিৎকার শুরু করে। জোবায়ের আল আমিনকে মাথায় তুলে ছুড়ে মারেন। এতে আল আমিনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। ওই অবস্থায় তাকে আবারও পেটায় জোবায়ের। আল আমিন অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে টয়লেটে রেখে আসা হয়। তাকে পানির ট্যাবের নিচে রেখে সেটি চালু করে দেয়া হয়। এক ঘণ্টা পর সেটি বন্ধ করা হয়। রাত ১টার দিকে সাইয়্যেদা টয়লেটে গিয়ে দেখে আল আমিন ওই অবস্থায়ই শুয়ে আছে। তাকে অনেকবার ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে সে প্রচণ্ড রেগে যায়। সে তার ঘাড়ে জোরে লাথি মারে। এতে আল আমিন টয়লেটের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছিটকে পড়ে। পরে টয়লেটের দরজা লাগিয়ে সাইয়্যেদা ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন রোববার সকাল ৭টার দিকে সাইয়্যেদার মা আনজু আরা টয়লেটের দরজা খুলে দেখেন আল আমিন ওই অবস্থাতেই মেঝেতে পড়ে আছে। তার হাত-পা ঠাণ্ডা। তখন তিনি জোবায়ের ও সাইয়্যেদাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। জোবায়ের স্থানীয় একটি ওষুধের দোকান থেকে একজনকে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে তিনি জানান, আল আমিন মারা গেছে।