বিনিশার রহস্যজনক মৃত্যুতে নেপালি শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি

রাজধানীর ভাটারাস্থ বেসরকারি পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের ২৩তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বিনিশা শাহ’র আত্মহত্যাকে ‘রহস্যজনক’ দাবি করে কলেজ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অল নেপলিজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বাংলাদেশে অধ্যয়নরত শতাধিক নেপালি শিক্ষার্থী পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

তাদের দাবি, বিনিশার মরদেহের সঠিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ওই দিনের পরীক্ষার কক্ষ থেকে বিনিশাকে কোথায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা জানতে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান তারা। এ নিয়ে মোট ৪টি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা।

বিনিশার রহস্যজনক মৃত্যুতে নেপালি শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি

এর আগে গত বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূ্চি পালন করে ডেন্টাল কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দুপুর পৌনে ২টায় বৈঠকে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়া খতিয়ে দেখে পূরণের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের রিসিপশনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্লোগান দিচ্ছে নেপলিজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীরা।

পুরুষোত্তম নামে সংগঠনটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিনিশা আত্মহত্যা করলো। কেন আত্মহত্যা করলো? নিশ্চয় এর নেপথ্যে কারণ আছে। আমরা সেটাই জানতে চাই। এতে যদি কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো খারাপ আচরণ কিংবা অন্যায় দাবি যুক্ত থাকে সেটার বিচার তো আমরা চাইবোই।’

ধীরাজ নামে অপর নেপলি শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিনিশার মৃত্যু রহস্যজনক। বিনিশা তো পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা দেয়া বাদ দিয়ে সে নিশ্চিয় কোনো কারণ ছাড়া হোস্টেলে ফিরে আত্মহত্যা করার কথা নয়। কিন্তু সে আত্মহত্যা করলো কেন? আজ বিনিশা আত্মহত্যা করলো কাল তো অন্য কেউ করতে পারে? সেক্ষেত্রে এর দায় কার? এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমরা বিচারের দাবি জানাই।’

নেপলি শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি :

১. বিনিশাকে পরীক্ষা কক্ষ থেকে কোথায় ডেকে নেয়া হয় তার ধারণকৃত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে প্রদর্শন। বিশেষ করে ১২ টা ২২ থেকে ১২ টা ৩০ পর্যন্ত সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ আমরা দেখতে চাই যা ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিলিট করেছে।

২. বিনিশার মৃত্যুর কারণ জানতে সঠিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।

৩. বিনিশার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখাসহ বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় নেপাল অ্যাম্বাসি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের জোরালো ভূমিকা দেখতে চান তারা।

৪. পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ কর্তৃকক্ষকে এখানকার শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১০ দফা দাবি পূরণ ও নেপলিজ শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৪ দাবির তিনটির দ্রুত বাস্তবায়ন।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হল থেকে বেরিয়ে হোস্টেলে গিয়ে আত্মহত্যা করেন কলেজটির নেপালি শিক্ষার্থী বিনিশা শাহ। পরে তার স্বদেশি রুমমেট রোখসা কক্ষে ফিরে দেখেন রুম ভেতর থেকে বন্ধ। অনেক চেষ্টার পর বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন বিনিশা রশিতে ঝুলছেন। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুর পৌনে ২টার দিকে ভাটারা থানাধীন পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের হোস্টেল রুম থেকে বিনিশার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতেই বিনিশার মৃত্যুর ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ।

ঘটনার পর পুলিশ জানায়, ‘বিনিশা আত্মহত্যা করেছে। তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের ডিরেক্টর (ফাইনান্স) জামিউল হোসেন জামিল বলেন, ‘বিনিশা পরীক্ষার কক্ষে অসদুপায় অবলম্বন করেছিল। নকলসহ সে ধরা পড়ে। তবে বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু সে পরীক্ষা শেষ করার আগেই হঠাৎ করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে হোস্টেলের নিজ কক্ষে গিয়ে আত্মহত্যা করে সে।’ লজ্জা ও আত্মগ্লানি থেকে বিনিশা আত্মহত্যা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।