সীমান্তে গরুবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় বিএসএফ নিহত

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানা এলাকার ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে গরুবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় এক বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়েছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে আংরাইল সীমান্তে তুষারকান্তি দাস (৪৭) নামে ওই বিএসএফ জওয়ান মারা যান। তার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানা এলাকায়। ওই ঘটনায় স্থানীয় এক বাসিন্দা আহত হলে তাকে বনগাঁ জে আর ধর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৃহস্পতিবার ভোরে ওই বিএসএফ জওয়ান বনগাঁ রামনগর রোডে প্রহরায় নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় দ্রুত গতিসম্পন্ন একটি চার চাকার ছোট গাড়ি আসতে দেখে তিনি সেটিকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পাচারের গরু ভর্তি ওই গাড়িটি না থেমে কর্মরত বিএসএফ জওয়ান ও এক পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি দোকানে ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়ে।

আহত বিএসএফ জওয়ানকে দ্রুত সহকর্মীরা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে, ওই ঘটনায় পাচারের জন্য গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া কয়েকটি গরুও মারা গেছে। মৃত বিএসএফ জওয়ানের আকস্মিক মৃত্যুতে আংরাইল বিএসএফ ক্যাম্পের ৬৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানদের মধ্যে ব্যাপক শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘাতক গাড়ির চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার সহকারিকে বিএসএফ আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ মে পাচারকারী দুর্বৃত্তদের আক্রমণে আংরাইলের বাসিন্দা ও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের (আরপিএফ) শিয়ালদহ শাখার কনস্টেবল নির্মল ঘোষ নিহত হয়েছিলেন। সে সময় আংরাইল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে ওই এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ করাসহ অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

গাইঘাটা থানা এলাকার আংরাইল সীমান্ত দিয়ে এসব খুব সহজেই পাচার হয় বিভিন্ন সামগ্রী। সরু একফালি ইছামতি নদীর মাঝ বরাবর এলাকা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চলে গেছে। নদীর ওপারে বাংলাদেশের যশোরের শর্শা থানার পুটখালি গ্রাম, এপারে গাইঘাটার আংরাইল গ্রাম। এপারে বিএসএফ এবং ওপারে বিজিবির প্রহরা থাকা সত্ত্বেও থেমে নেই পাচারকারীরা।

২০১৫ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আংরাইল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সীমান্তের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেন। এ সময় তিনি নিহত আরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অপরাধীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, মাঝে মধ্যেই বিএসএফের কর্মকর্তারা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু পাচার চলছেই। শুধু পাচার পদ্ধতির ধরণ পাল্টেছে মাত্র। আগে খোলা গাড়িতে গরু যেত এখন মারুতি বা এই জাতীয় ঢাকা গাড়িতে করে যাচ্ছে। ছোট চার চাকার গাড়িতে নীচে গরু দিয়ে ওপরে সবজির ঝুড়ি অথবা কাঠ বোঝাই করে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়েই চলছে অভিনব উপায়ে গরু পাচার।