দূর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা

প্রতি বছর শরৎকালে দেবী দূর্গার আগমন হয় নিজ ভূমিতে। সনাতন ধর্মের শাস্ত্র মতে জানা যায়, বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। হিমালয়ের কৈলাশে তার স্বামী শিবের বাস। সেখান থেকেই সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্ত্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে।

মা দেবীকে বরণ আর আরাধনায় মেতে উঠতে ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে পূজার মন্ডপ তৈরি ও প্রতিমা তৈরি এবং সাজসজ্জার কাজ, আর তাই শেষ মহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাছে সনাতন ধর্মালম্বীরা। সনাতন ধর্ম মতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। এভাবেই মর্ত্যলোকে আবাহন ঘটে দেবী দুর্গার। মন্দিরে মন্দিরে উচ্চারিত হয় ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ’। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। ঘনিয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব র্দূগাপূজা। জগৎ জননী মায়ের আগমনে মাতৃভক্ত সন্তানদের হৃদয়ে চলছে আনন্দধারা। এই আনন্দকে সবার মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে সারা দেশের মতো পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও চলছে দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ।
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় পূজা এই দূর্গাপুজা, তাই দেবী দূর্গাকে আহবান আর শান্তির প্রত্যাশায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।

বান্দরবান জেলায় এবার সব মিলিয়ে পূজামন্ডপ হবে প্রায় ২৭ টি। যার মধ্যে শুধু জেলা সদরেই মন্ডপ হবে ১১টি। স্থানীয় রাজার মাঠেই তৈরি করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় মন্ডপ। ব্যায় করা হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূর্গাদেবীর প্রতিমা ছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে নজর কারা বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা। অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফল করতে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিও সেরে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বান্দরবান কেন্দ্রীয় দূর্গাপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, আসন্ন শারদীয় দূর্গাপুজা উপলক্ষে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, আশা করি আগামী ২৬ তারিখ থেকে মহাআনন্দের সাথে আমরা এই উৎসব পালন করতে পারবো।

বান্দরবান কেন্দ্রীয় দূর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাশ রাজেশ্বর জানান, এবারে দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকায় আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আশা করি আমরা জাকজঁমক একটি পূজা উদযাপন করতে পারবো। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যদি ভালো থাকে তাহলে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না। এদিকে এবারের পূজায় আইনশৃংখলা রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন পুলিশ সুপার । বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, বান্দরবান একটি শান্ত এলাকা আর এখানকার সকলের মধ্যে শান্তি আর সম্প্রীতি বহমান, আর সনাতন ধর্মালম্বীদের এই পূজাকে ঘিরে বান্দরবানের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ।

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শারদীয় দূর্গোৎসবের উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই ডিজিটাল লাইটিংয়ের মাধ্যমে মহামায়ার আর্বিভাব ও দেবতা কর্তৃক অস্ত্রপ্রদান প্রদর্শনী, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনের এই উৎসব আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এই শারদীয়া দূর্গাপূজার সমাপ্তি হবে।

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি