প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পাচার হওয়া কিছু শিশুর চিঠি, আজ তারা দেশের মাটিতে
বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া কয়েকটি শিশুকে আজ বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়েছিলো। এসব শিশুকে রাখা হয়েছিলো দক্ষিণ দিনাজপুরে শুভায়ন নামের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। এই শিশুরা সবাই মিলে প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছিলো।
ভারত সরকার, চাইল্ড লাইন, শুভায়ন আশ্রয় কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ও মধ্যস্থতায় আজ আর কয়েক ঘণ্টা পরে হিলি সীমান্তে তাদেরকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। চাইল্ড লাইনের সমন্বয়কারী সুরজ দাশ বলেন আজ ছয়টি শিশুকে পাঠানো হচ্ছে, তবে তার পরেও আরও অন্তত ৪০টি শিশু রয়ে যাচ্ছে। এসব শিশুরা গত দেড় দু বছরে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে। এসব শিশুরা কেউ পাচারের শিকার কিংবা কেউ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছিলো। এর আগে ৩৮টি বাংলাদেশী শিশু-কিশোর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে অনুরোধ করেছিলো তিনি যেন তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
শুভায়ন নামের ওই হোমটিতে এই মুহূর্তে আটক রয়েছে মোট ৪৭ টি বাংলাদেশী শিশু-কিশোর। ওই কিশোরেরা শেখ হাসিনাকে লিখেছে, “আমাদের মধ্যে অধিকাংশই কাজের প্রলোভনে পা দিয়ে দালাল মারফত ভারতে অনুপ্রবেশ করি। কেউ আবার বেড়াতে এসে ধরা পড়ি। বিনা পাসপোর্টে ভারতে ঢুকে পড়ে বি এস এফ অথবা পুলিশের কাছে ধরা পড়ি। এখন আমরা শুভায়ন হোমে আটক আছি।”
“অনুগ্রহ করে আপনার একটু সহযোগিতা পেলে দেশে আমাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারি। আমাদের এই অসহায় দুর্দশার হাত থেকে আপনি-ই আমাদের উদ্ধার করতে পারবেন,” শিশু কিশোরেরা আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তারা আরও লিখেছে যে বাবা-মা আর পরিজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। একেকটা দিন এক বছরের মতো মনে হচ্ছে তাদের।
শুভায়ন নামের ওই সরকারী শিশু-কিশোর হোমের সুপারিন্টেনডেন্ট দাওয়া দোর্জি শেরপা গত বছর অগাস্টের শুরুতে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “৩৮ জন শিশু কিশোর ওই চিঠিতে সই করার পরে আরও নয়জন বাংলাদেশী ছেলে আমাদের হোমে এসেছে। এর মধ্যে মাত্র চারজনের শিশু-কিশোর আদালতে বিচার চলছে, বাকিরা সবাই মুক্ত। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন বা সেদেশের বিদেশ মন্ত্রক থেকে নাগরিকতা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। সেজন্যই আমরা এই গণ আবেদন করিয়েছি ওদের দিয়ে।”
কিন্তু এতো সময় লাগলো কেন বাচ্চাগুলোকে দেশে ফেরাতে? জবাবে সুরজ দাশ বলেন নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই এসব বিলম্ব হয়। শুভায়ন হোমে থাকা বাকী শিশুদের ধাপে ধাপে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।