ফ্যাশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্রচারনা
বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রীতে আপাদমস্তক শিল্পসত্তায় পরিপূর্ন একজন উদ্যোক্তা বিপ্লব সাহা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১ম বিভাগে এম এফ এ সম্পন্ন করে শিল্পসত্তাকে দেশ ও জাতির কল্যানে ব্যাবহারের প্রচেষ্টায় আত্মমগ্ন হন সেই ১৯৯৪ সাল থেকেই। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই অস্থির সময়েও নিজস্ব শেকড়ের সন্ধান করতে গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দেশীয় তাঁত কে প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়।
এদেশের অন্যতম ফ্যাশন ব্রান্ড “বিশ্বরঙ” ১৯৯৪ সাল থেকে ভিন্নধর্মী কাজের জন্যই ফ্যাশন সচেতনদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত। বিগত সময়ে বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে ফ্যাশন সচেতনদের জন্য অন্তঃপ্রাণ প্রচেষ্টার ফসল বিপ্লব সাহার নিরীক্ষামূলক কাজ।
এ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য-শখের হাড়ি, মুখোশ, নকঁশী পাখা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলার পটচিত্র, বাংলা পঞ্জিকা, পানাম নগর, কান্তজী মন্দিরের টেরাকোটা, রিক্সা মোটিফ সহ আল্পনার মত মহামূল্যবান মোটিফকে পোশাকের অলংকরন হিসেবে ব্যাবহার করে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে নিয়ে যেতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমৃদ্ধির শিখড়ে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে প্রদর্শন করেছেন আমেরিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডা’র মত ফ্যাশন সচেতনদের দেশে। বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রীতে উপহার দিয়েছেন পোশাকে অতি উজ্জল রঙের উপস্থিতিকে যা বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিকে আরো রাঙ্গিয়েছে অনুকরনীয় ভাবে। টাঙ্গাইলের মলিন তাতের শাড়ীকে আধুনিক ফ্যাশনের অনুষঙ্গ করতে নিরলস প্রচেষ্টার ফলাফল বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রিতে বিদ্যমান। বিভিন্ন দিবসে পোষাকের বর্নিলতা বিপ্লব সাহার মাধ্যমেই শুরু হয়, যা আজ অভিন্ন এক রীতিতে সামগ্রিক ভাবে প্রচলিত।
বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরবময় উৎসব বৈশাখ উদ্যাপনে প্রতি বছরেরন্যায় দেশীয় ইতিহাস ঐতিহ্যের বিভিন্ন বিষয়কে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ করতে গিয়েই ২০১৭ সালের বৈশাখে প্রথম বিপ্লব সাহার ভাবনায় আসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি সময়ের ইতিহাস, ঐতিহ্যময় বাংলা চলচ্চিত্রের স্থির চিত্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের অনুপ্রেরণায় বাংলা নববর্ষ বৈশাখের পোশাকে বর্ণিল অলংকরনের ভিন্ন মাত্রার প্রয়াসে নান্দনিকতার প্রকাশ। সে বছরই প্রথম বিপ্লব সাহার সেই ভাবনা প্রকাশে গৌরবময় উৎসব বৈশাখ উদ্যাপনে বৈশাখী পোশাকের নামকরন করা হয় “ঐতিহ্যে বাংলা সিনেমা” সংকলন যা বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রীতে মাইল ফলক হয়ে থাকবে আজীবন।
সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় এ দেশে ফ্যাশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্রচারনার প্রচলন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত মিসির আলি ধারাবাহিকের একই নামের প্রথম উপন্যাস থেকে সরকারী অনুদানে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র “দেবী”। যার অভিনব আঙ্গীকে প্রচারনার মাধ্যম হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বেছে নেন পোশাককে। ফ্যাশন শো এর মাধ্যমে প্রথম বারের মত চলচ্চিত্রের প্রচারনার প্রচলন শুরু হয় এদেশের চলচ্চিত্র এবং ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রীতে। এর পরে এক এক করে -পরান, গলুই, বিউটি সার্কাস, মা চলচ্চিত্রের প্রচারনা পরিকল্পনা ফ্যশনকে সংযুক্ত করেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। এখন রিতীমত এ দেশে একটি ট্রেন্ড চালু হয়ে গেছে ফ্যাশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের প্রচারনার। আমরা যার অগ্রপথিক বলতে পারি ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহাকেই।
বিপ্লব সাহাকে একক কোন পরিচয়ের ছকে বাধা যায়না, তিনি একাধারে একজন চিত্রশিল্পী, জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার, সঙ্গীতশিল্পী এবং ফ্যাশন হাউস ‘বিশ্বরঙ’-এর কর্ণধার।
শুধু পোষাকে সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকেই ২০১০ সালে জাতীয় যাদুঘরে প্রথম বারের মত “আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে রঙের উপস্থিতি” শীর্ষক এক যুগান্তকারী প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, যা সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে বোদ্ধা মহলেও ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। সময়ের প্রয়োজনে দেশীয় বুটিক শিল্পকে রক্ষায় রাজ পথেও ছিলেন সরব।
শিশুদের মেধাবিকাশের লক্ষ্যে আয়োজন করেন “মা” দিবসে “আমার রঙে আমার মা” শীর্ষক এক ব্যাতিক্রমধর্মী প্রতিযোগীতা ও প্রদর্শনীর। শিশুদের আকাঁ প্রানবন্ত চিত্রকলাকে ফ্যাশনের উপাত্ত হিসেবে ব্যাবহার করে দিয়েছেন ভিন্ন মাত্রা। “বিশ্বরঙ” থেকে আয়োজন করেন ‘টোয়েন্টি- টোয়েন্টি কালার্স’, সারদ সাজে “বিশ্বরঙ” এর দিদি, বাসন্তী সুন্দরীর মত তুমুল জনপ্রিয় সব রিয়েলিটি শো। সারাদেশের টিনএজদের মধ্য থেকে প্রতিভাবানদের বাছাই করে উন্নত প্রশিক্ষনের মধ্য দিয়ে এদেশের মিডিয়াকে উপহার দিয়েছিলেন একঝাক নতুন মুখ। যাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করছে এখন।