হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রবেশ করেছে চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র

যেই মুহুর্তে চীনে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারন করেছে, সেই মুহুর্তে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে করোনা ভাইরাসের ভয়ে চীন থেকে পালিয়ে আসা চীনের ইউনান ইউনির্ভাসিটির এক বাংলাদেশী ছাত্র।

চীন থেকে ভারত হয়ে চীনে অধ্যয়নরত মোঃ আবু রায়হান (২৩) নামে ওই ছাত্র তেমন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুজ্জামান জানান, মোঃ আবু রায়হান দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার থানাপাড়া এলাকার মোঃ মোস্তফা কামালের ছেলে। সে চীনে ইউনান ইউনির্ভাসিটিতে লেখাপড়া করতো। গত ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সে চীনে যায় এবং চীনে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারন করার পর গত ২৯ জানুয়ারী সে বিমানযোগে ভারতে প্রবেশ করে এবং গত ৩১ জানুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় সে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

ওসি রফিকুজ্জামান আরও জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় হিলি ইমিগ্রেশনে সে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে হিলি ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করে। এরপর চীন থেকে আসার তথ্য পেয়ে স্থানীয় হাকিমপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমুছ সাঈদকে ডেকে এনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

হাকিমপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুছ সাঈদ জানান, ওই ছাত্র হিলি চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে সেখানে দায়িত্বরত মেডিকেল টিম থার্মোমিটার দিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তার শরীরে কোনোরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি সুস্থ্য আছেন। তারপরেও তাকে তার বাড়ীতে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ জানান, তাকে হোম আইসোলোসনে রাখা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। কিন্তু ওই ছাত্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা অনুযায়ী চীন থেকে কেউ ফিরে আসলে অন্তত ১৫ দিন আটকে রেখে পর্যবেক্ষন করার নিয়ম আছে-এমন প্রশ্ন করা হলে সিভিল সার্জন তেমন সদুত্তর দিতে না পারলেও বিষয়টি তিনি এখন দেখবেন বলে জানান।

চীন থেকে ফিরে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মোঃ আবু রায়হানের সাথে গতকাল রোববার বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি সুস্থ্য আছেন এবং ঘোরাফেরা করছেন। তিনি জানান, চীনে বিমানবন্দরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কলকাতা বিমানবন্দরেও তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তার শরীরে ভাইরাসের কোন উপসর্গ নেই-এমন নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে আসতে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, হিলিতে তেমন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি, শুধুমাত্র কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছে। তবে তিনি এখন মাস্ক ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গত শুক্রবার দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মেডিক্যাল টীমের নামে একটি টেবিল বসানো থাকলেও ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেই কোন চিকিৎসক। এমনকি নেই কোন থার্মাল স্ক্যানারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। টেবিলে আলেয়া আখতার নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী বসে আছেন এবং করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামুলক উপদেশ দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারী আলেয়া আখতার জানান, তাকে কোন যন্ত্রপাতি দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র একটি থার্মোমিটার। তিনি জানান, ভারত থেকে আগত যাত্রা এবং বহির্গমনের যাত্রীদের তিনি শুধু করোনা ভাইরাস সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

ফখরুল হাসান পলাশ, দিনাজপুর প্রতিনিধি