বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পাঁচ সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ শূন্য
ভারতের সাথে ছয়টি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সাথে রয়েছে দেশটির সমুদ্রসীমান্ত। সবগুলো দেশের সীমান্তেই মোতায়েন করা আছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশের সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড চালাবে না বলে জানিয়েছিলো ভারত। তবুও বিএসএফ’এর হাতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা কোনোভাবেই কমছে না।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। বেসরকারি হিসেবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
মানবাধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা জোরালো প্রতিবাদ জানানোর কথা ছিলো, সেটা ততটা জোরালো নয়।
অথচ ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ভারত- নেপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী এসএসবির গুলিতে গোবিন্দ গৌতম নামে (৩২) এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
নেপালের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়া ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তখন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। সাথে সাথে নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। পরে গোবিন্দ গৌতমকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদা দেয়া হয়।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্রের ব্যবহার করার কথা থাকলেও উল্টো প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। নানা আশ্বাস ও সমঝোতার পরেও সীমান্তে হত্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বন্ধুত্বসূলভ সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, ‘ভারতের সাথে ৬টি দেশের সীমান্ত থাকলেও বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদেশের সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নেই বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বেপরোয়াভাবে মানুষ খুন করে যাচ্ছে।
এর মূল কারণ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় আমরা দিতে পারছি না। ভারত বার বার সীমান্তে হত্যা বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে কথা দিয়েও কথা রাখছে না। এ জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মহলের দ্বারস্থ হতে হবে।’
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল ঢাকার পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের (লিথ্যাল উইপন) ব্যবহার হবে না বলে জানানো হয়। বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের মতো বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) কে কে শর্মাও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিভিন্ন সময়ে যতোই ‘নন-লিথ্যাল উইপন’ ব্যবহারের আশ্বাস দেয়া হয়েছে ঘটেছে উল্টোটি।
গত ২ জানুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিজিবির হিসেবে গতবছর সীমান্ত হত্যার সংখ্যা ৩৫। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হিসেবে এ হত্যার সংখ্যা আরো কম। তবে গত চার বছরের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ।
সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিএসএফকে এ বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিএসএফ প্রধানও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’