দেশের দুই পুঁজিবাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর ৬ পদক্ষেপ

দেশের দুই পুঁজিবাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ছয়টি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাধ্যমে এই পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। সরকারি এসব পদক্ষেপে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

এছাড়া শেয়ারবাজারের চলমান অস্থির অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক)। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের পর পরই দেশের দুই পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ারবাজারের সংকট নিরসনে আগামী ২০ জানুয়ারি স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ খবর প্রকাশের পর পরই কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। সূচকের বড় উত্থানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ, বর্তমানে চার হাজার ১৪৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২০৭ পয়েন্ট।

সরকার এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরপতন চলছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিনে সূচক কমে তলানিতে নেমে এসেছে। যা গত পাঁচ বছর আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। গত ১৪ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরপতনের প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের নির্ধারণী মহল থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬ পদক্ষেপ :  দেশের পুঁজিবাজার গতিশীল করে সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ৬টি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক নীতিনির্ধারণী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজার রক্ষার পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে—শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো। মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

ওই নির্দেশনায় আরও রয়েছে—দেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা চিহ্নিত করে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।