জনতার আদালত বসিয়ে বানরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড!

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় লোকালয়ে তাণ্ডব চালিয়ে ৩৫ ব্যক্তিকে আহত করার পর সেই বানরটিকেও মেরে ফেলেছে এলাকাবাসী। গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খাইয়ে দিনব্যাপী ধাওয়া করার পর বিকেলে বানরটিকে একটি ধানখেত থেকে আটক করা হয়। পরে “জনতার আদালত” বসিয়ে বানরটিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে স্থানীয় জনতা।

অভিযোগ উঠেছে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন ইতোপূর্বে ওই এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী লোকজনকে বানরটি মেলে ফেলার নির্দেশ দেন। যদিও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

জানা গেছে, বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের দলছুট একটি বানর গত ২০ দিন আগে উপজেলার কাঁঠালতলী এলাকার লোকালয়ে আসে। বানরটি কাঁঠালতলী, রুকনপুর, বড়খলা, দক্ষিণ মুছেগুল, উত্তরভাগসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে নারী, শিশু, পথচারী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। এ সময় বানরের হামলায় আহত হয় নারী-শিশুসহ ৩৫ জন।

বানরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ লোকজন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হলে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিনকে খবর দেন।

ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ১০ দিন আগে রেঞ্জ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বানরটিকে বনাঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এলাকার লোকজনকে সেটিকে মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। আর তখন থেকেই বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য ছয়-সাতজন যুবক বানরটির পিছু নেন।

মঙ্গলবার সকালে ভাতের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বানরটিকে নেশাগ্রস্ত করে বাগে আনেন তারা। উত্তেজিত জনতা ওইদিনই বিকেল ৩টার দিকে একটি ধানখেত থেকে বানরটিকে আটক করে। পরে স্থানীয় কাঁঠালতলী বাজার সংলগ্ন স্থানে শত শত জনতা “আদালত” বসিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বানরটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, প্রায় ২০ দিন ধরে ৬/৭টি গ্রামের লোকজন ওই বানরের আক্রমণে আতঙ্কিত ছিলেন। এর হামলায় আহত হয়েছে ৩৫ জন। এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দিলে রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন কয়েকদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু লোকালয় থেকে বানরটি তাড়ানোর ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি লোকজনকে বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে যান। পরে মঙ্গলবার লোকজন বানরটিকে মেরে ফেলে।

পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে একটি টিলায় বানরটির মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জুলহাস উদ্দিন বলেন, “বানরের উপদ্রপের খবর পেয়ে ইতোপূর্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে বানর ধরা বা তাড়ানোর সরকারি কোনো সাপোর্ট না থাকায় বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য লোকজনকে পরামর্শ দেই।”

পরে মেরে ফেলার খবর শুনে তিনি বলেন, “তাতে ভালোই হয়েছে।”