এখতিয়ার বিহীন ১২১ শিশুর দণ্ড, মুক্তি দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে হাইকোর্টের নির্দেশ

বিভিন্ন অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গাজীপুরের টঙ্গী এবং যশোরের শিশু-কিশোর সংশোধন উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২১ শিশুর সবাইকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কারাবন্দী শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ১২ বছরের কম, তাদের তাৎক্ষণিক মুক্তি ও ১২ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুদের ছয় মাসের জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব শিশুর সাজা দেওয়া সংক্রান্ত নথি এক সপ্তাহের মধ্যে তলব করেছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, কোনো শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারে না। শিশুরা অপরাধ করলে তাদের বিচার হবে শিশু আদালতে। এক দিনের জন্য কোনো শিশুকে বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে আটকে রাখার এখতিয়ার নেই।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে এ আদেশ দেন। আদালতে প্রতিবেদনটি নজরে আনেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্টই বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিয়ে চলেছেন। এ মুহূর্তে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১টি শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিশু আইনের পাশাপাশি হাইকোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১টি শিশু সেখানে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী আছে ২৮ জন। ২৬ জনের বয়স ১৬, ২০ জনের বয়স ১৫, ১৬ জনের বয়স ১৪, ১১ জনের বয়স ১২। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। একজনের বয়স উল্লেখ নেই। দণ্ডিতদের মধ্যে ৭৫ জনকে দণ্ডবিধির ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী চুরির দায়ে ছয় মাস এবং ৩৪ জনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী এক বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শুধু একটি শিশু দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় ছয় মাসের সাজা পেয়েছে। ১৩ বছর বয়সী শিশুটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতিসাধনের হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।