জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানতে আপত্তি জানালেন রওশন এরশাদ

জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান পদে মানতে আপত্তি জানালেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। সোমবার (২২ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি দাবি করেন, যথাযথ কোনো ফোরামে আলোচনা ছাড়াই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রওশন। এতে তাকে সমর্থন দিয়েছেন সাত সংসদ সদস্যসহ পার্টির দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘‘আমি এই বিবৃতি দিয়েছি। জরুরিভিত্তিতে করার কারণে বিবৃতিটি হাতে লেখা হয়েছে।’’

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর আগে গত জুনে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন তিনি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মেনে নিলেও এরশাদের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। আর এর পাঁচদিন পরেই তাকে চেয়ারম্যান পদে মানতে আপত্তি জানালেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা।

সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এই বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ লিখেছেন, ‘‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মারফত আমরা জানতে পেরেছি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।’’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বপালনকালে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০ (২) এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা-‘‘মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২) এর ‘ক’ কে উপেক্ষা করা যাবে না।’’

বিবৃতিতে দলের সব নেতাকর্মীকে গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এঘোষণার প্রতি একমত পোষণকারী আরও সাতজন সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জাতীয় পার্টির ঘোষিত চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

এরমাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিভক্তির বিষয়টি আবারও সামনে চলে এলো। এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দলের নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা নিয়ে যে বিবাদের সৃষ্টি হতে পারে তা রাজনৈতিক মহলে অনুমতিই ছিল। বিশেষকরে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার আসন নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি এমন আভাস আগেই দিয়েছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলের আসনে গিয়ে গত জানুয়ারিতে জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ঘোষণা করলেও সেসিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেননি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংসদের প্রথম অধিবেশনের পরেই তাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করতে বাধ্য হন তিনি।

এরও আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে রওশন ও জিএম কাদেরের পারস্পরিক মত পার্থক্য ভীষণ দোটানায় ফেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে। সরকারিদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে তাদের সঙ্গে জোট গড়ার লবি করেন রওশন এরশাদ। এরশাদ তার চাপে মহাজোটে থাকার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রী থাকার পরেও বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় জাতীয় পার্টিকেও নির্বাচনের বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান জিএম কাদের ও তার অনুসারীরা। ফলে দোটানায় পড়ে এরশাদ একবার নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন, আবার পর মুহূর্তে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক তামাশার সৃষ্টি করেন। এঅবস্থায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকতে হয় তাকে। নির্বাচনে না গিয়ে টানা পাঁচবছর সংসদের বাইরে ছিলেন জিএম কাদের। এদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন রওশন এরশাদ। আর হাসপাতালের শয্যায় থেকেও নির্বাচিত হয়ে পাঁচবছর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষদূত ছিলেন এরশাদ।