মিন্নির পক্ষে লড়তে চাইঃ বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব

বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির মামলা হাইকোর্টে এলে তাকে আইনি সহায়তা দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক ব্রিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

খন্দকার মাহবুব বলেন, তাকে যদি জামিন না দেয়া হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই উচ্চ আদালতে যখন আসবে তখন এর প্রতিবাদ করব। কে দোষী, কে দোষী না সেটা বড় কথা নয়। আমরা চাই আইন অনুযায়ী বিচার হবে, আইন অনুযায়ী সাজা হবে।

উচ্চ আদালতে বিষয়টি এলে মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেবেন কি না- এমন প্রশ্নে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অবশ্যই। বিচার যাতে সঠিকভাবে হয়, ন্যায়বিচার যাতে পায়। রাজনৈতিক প্রভাবে যাতে বিচার না হয় সেটাই আমরা দেখব।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি রাজনৈতিক প্রভাবে আমাদের নিম্ন আদালতগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের আদেশকেও তারা অমান্য করছেন।

বরগুনার অধিবাসী সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, বরগুনায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডের পর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নেয়া হয়েছে। কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা সেটা বিচারে দেখা যাবে। আমাদের কথা হলো- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, যদি কাউকে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়া হয় তাকে অবশ্যই বিচারিক আদালতে উপস্থিত করতে হবে। যাতে সে বলতে পারে রিমান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা।

তিনি বলেন, নির্যাতন যদি করা হয় ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা। তারপরও একজন নারীকে, তরুণী মেয়েকে একজন পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার হেফাজতে দেয়া হলো। একবারও আদালত চিন্তা করলেন না। তার ওপর কী ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন হতে পারে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিচারক কোনো রকম বিবেচনা না করে তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে দিলেন। কিন্তু কথিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর তাকে আদালতে না নিয়ে সরাসরি জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। তার আইনজীবী আবেদন করল, মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, সেটা প্রত্যাহার করতে চায়। আপনি তাকে আদালতে আনেন। কিন্তু তাকে আনা হলো না। এভাবে আইনের বরখেলাপ হচ্ছে।

খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিধান রয়েছে, যেকোনো অপরাধে আসামি যদি নারী হয়, যদি অসুস্থ হয়, তাহলে আদালত তাকে জামিন দেবেন। এক্ষেত্রে তার জামিনের আবেদন করা হলেও আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে মামলার মূল আসামিরা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, সে কারণে তাকে জামিন দেয়া হলো না। এটাও আইনের বরখেলাপ- যোগ করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় স্বামী রিফাত শরীফকে। পরে ওইদিন বিকেলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্বামী রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত ২১ জুলাই একই আদালতে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। পরে ২৩ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে জামিন আবেদনের পর ৩০ জুলাই সেই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।