হাসপাতালের বাগানে নবজাতকের কান্না, আয়ার নামে মামলা

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালের ক্যাম্পাসের বাগানে থেকে একটি জীবিত নবজাতক কন্যা শিশুকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে এক মহিলা হাসপাতলের ক্যাম্পাসের মধ্যে বাগানে তার ছাগল খুঁজতে যায়।

এ সময় বাগানে পড়ে থাকা লাল একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে শিশুর কান্না শব্দ শুনতে পান তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজনকে খবর দিলে শিশুটি উদ্ধার করে হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার অমিত কুমার নাথ শিশুটিকে চিকিৎসা দেন।

ডাক্তার অমিত কুমার নাথ এ প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান তারিককে বলেন, এটি সম্ভবত ৭মাসের বাচ্চা ৮শ’ গ্রাম ওজন। তাড়া অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়েছে এখন দেখা যাক পরবর্তী অবস্থা কি হয়। এ ঘটনার পর এলাকাবাসী হাসপাতালের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ওই হাসপাতালের আয়া রিনা খাতুনের বাসার সামনে থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে যাওয়ার সময় শিশুটির পিতা-মাতাকে এ্যাম্বুলেন্সসহ আটক করে থানায় খবর দেয়। সাথে সাথে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বাচ্চাটি জীবিত আছে জানতে পেরে আয়া রিনা খাতুন কৌশলে তার ভাড়ায় খাটানো নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স ডেকে শিশুটি’র পিতা-মাতাকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত করে। তার আগেই এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে শিশুটি’র মা ববিতা খাতুন (৪৫) কে হাসপতালে ভর্তি করে দিতে বলেন। এ সময় শিশুটি’র মা ববিতা খাতুনের শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্তখরণ হচ্ছিল। পরে তাকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। পুলিশ শিশুটির পিতা আক্কাস আলীকে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।

এমন হৃদয় বিদায়ক ঘটনা নিয়ে শিশুটির পিতা আক্কাস আলী দাবী করেন, আমার আরো দুইটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে যশোহর এমএম কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র আর মেয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় এ সময় আবারও বাচ্চা জন্ম দিলে তারা (পিতা-মাতা) ছেলে মেয়ের কাছে লজ্জায় পড়বেন।

তিনি বলেন, তার অজান্তেই স্ত্রী ববিতা খাতুন বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের আয়া রিনা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করেন।

আক্কাস আলী বলেন, আয়া রিনা খাতুন নিজেকে ডাক্তার দাবী করে তার স্ত্রীকে বাসায় আসতে বলেন। স্ত্রীর কথা মত শনিবার সকালে আক্কাস আলী ও তার স্ত্রী ববিতা খাতুন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে রিনার খাতুনে বাসায় আসেন। পরে ববিতা খাতুনের গর্ভপাত ঘটিয়ে আয়া রিনা খাতুন লাল একটি প্যাকেটে ভরে বাচ্চাটা মারা গেছে বলে ববিতার স্বামী আক্কাস আলীর হাতে প্যাকেটটি ধরিয়ে দিয়ে পাশের বাগানে ফেলে দিতে বলেন। তিনি সরল বিশ্বাসে প্যাকেটটি ফেলে দিয়ে আসেন। কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাংবাদিকদের বলেন-আক্কাস আলী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের আয়া রিনা খাতুনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এদিকে নবজাতক শিশুটি ও মা ববিতা খাতুনের অতিরিক্ত রক্তখরণ হওয়াতে উভয় জীবন সংকটাপন্ন হওয়াতে ডাক্তাদের পরামর্শে রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিকাল ৩টার দিকে তাদের স্বজনরা যশোহর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থা ও পঃ পঃ কর্মকর্ত ডাঃ আবদুর রশিদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, আয়া রিনা খাতুন এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি