ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রাশি রাশি সোনা, প্লাটিনাম

পৃথিবীতে দামি জিনিসের একটি সোনা। অথচ ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রাশি রাশি সোনা, প্লাটিনাম। পৃথিবীতে এই সোনা, প্লাটিনাম খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায় বলেই তা এতোটা মূল্যবান। অথচ প্রতি বছরই সূর্যের ওজনের ২০ গুণ বেশি সোনা তৈরি হচ্ছে ব্র?হ্মাণ্ডে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল।

তৈরি হওয়া সেই সোনা, প্লাটিনাম আবার ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে। প্রশ্ন জাগতে পারে সোনার জন্ম হয় কীভাবে। অর্ধ শতাব্দী ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পর গবেষণাগারে কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে জানা গেছে সেই রহস্যের কথা। গবেষণা দলে রয়েছেন দুই খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও কলম্বিয়া অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ব্রায়ান মেত্ঝার ও ড্যানিয়েল এম সিগেল। রয়েছেন আরো একজন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেনিফার বার্নস।

ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি) বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সূর্যের ওজনের চেয়ে ৩০ থেকে ৬০ গুণ ভারি কোনো তারা বা নক্ষত্র যখন মরে যেতে শুরু করে তখন প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণ হয়। তাকে বলা হয়, ‘সুপারনোভা’। আবার কখনো মৃত্যুর সময়ে পৌঁছে গোটা একটি তারার ওই বিস্ফোরণ হয় না। কোনো কোনো বিশাল তারা তার নিজেরই চারদিকে লাট্টুর মতো বনবন করে খুব জোরে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। সেগুলিকে বলা হয়, ‘কোল্যাপসার্স’। সেই তারাটির মাথা আর পায়ের দিক তার শরীরের একটি বড় অংশ আলাদা দু’টি ‘জেট’ বা স্রোত হয়ে আগে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। এগুলিকে বলা হয়, ‘লং গামা রে বার্স্ট’। তারাটির পেটের দিকে তৈরি হয় একটি ব্ল্যাক হোল। পেটের দিকে অংশের বাইরের দিকটায় থাকে লোহা, কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মৌলগুলি। আর ভিতরটা ভরা থাকে নিউট্রনে। সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের বিকিরণের বল এতটাই হয় যে নিউট্রন কণাগুলি আর তখন ভিতরে তৈরি হওয়া ব্ল্যাক হোলের দিকে এগিয়ে না গিয়ে দূরে চলে গিয়ে বাইরে থাকা লোহা, কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মৌলগুলির সঙ্গে জুড়ে গিয়ে সোনা ও প্ল্যাটিনামের মতো ভারী মৌলগুলি তৈরি করতে শুরু করে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের দেওয়া তথ্য মতে, উত্তোলন শুরুর পর থেকে ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ওজনের সোনা খনি থেকে তোলা হয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ ভূপৃষ্ঠের নীচ থেকে সোনা তুলতে অনেক বেশি নীচে নামতে হবে বলে তা খুবই খরচসাপেক্ষ। আর ২০৭৫ সালের পর অবস্থাটা এমন হবে যে খনি থেকে সোনা উত্তোলনের চালু প্রযুক্তি আর কাজেই লাগবে না। অন্যদিকে আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য মতে, ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৯২ টন ওজনের প্লাটিনাম উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। এখন যে হারে তোলা হচ্ছে, তাতে আর একশো বছরেই পৃথিবীর সব প্লাটিনামের মজুদ শেষ হয়ে যাবে।

মূলত ব্ল্যাক হোলের বিকিরণ বলের কারণেই সোনা কিংবা প্লাটিনামের জন্ম নেওয়া সম্ভব হয়েছে। বিকিরণের বলের কারণেই মৃত্যুর দিকে ধাবমান গ্রহের বস্তুগুলি ব্ল্যাকহোল থেকে দূরে সরে যায়। বিকিরণের প্রভাবে যদি সেই সব বস্তুগুলি সরে না যেতো তাহলে ওই বস্তুগুলি থেকে সোনা ও প্লাটিনামের মতো ভারি মৌলগুলি তৈরি হতে পারত না। জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবীর অভ্যন্তরে ছিল সোনা ও প্লাটিনামের মতো বহু মূল্যবান মৌলগুলি। সেগুলিও তৈরি হয়েছিল এই ভাবেই।