আজ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট পাস

প্রস্তাবিত বাজেট পেশের পর এবার সবার চোখ ছিল অর্থ বিল পাসের দিন কী হয়। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে যত পরিবর্তন এ দিনই হয়। তবে এবার বড় কোনো পরিবর্তন বা চমক ছাড়াই পাস হয়েছে অর্থ বিল। আর এতে সবচেয়ে বেশি আশাহত হয়েছে মধ্যবিত্তরা। সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব হয়েছিল। তুমুল আলোচনার মধ্যেও তা বহাল রাখা হলো।

অর্থবিল পাসের পরও সুযোগ থাকে। আজ বাজেট পাস হবে। এখন ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দিকে সবাই তাকিয়ে। কারণ শেষ দিন প্রধানমন্ত্রীর চমক বলে একটা কথা আছে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সবচেয়ে সমালোচিত দিক সঞ্চয়পত্রের বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করা উচিত। আর তা করতে পারেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত উৎসে কর না কমানোয় সরকারের সমালোচনা করে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়িয়ে গরিবদের সঙ্গে প্রহসন করেছে। কারণ সঞ্চয়পত্র সবার জন্য নয়।

এখানে মধ্যবিত্ত ও গরিবরাই বিনিয়োগ করে। উৎসে কর বাড়িয়ে সুদের হার এক প্রকার কমানো হয়েছে। এটা করে গরিবদের বোকা বানানো হয়েছে। এর কোনো দরকারই ছিল না। বাজেট এখনো পাস হয়নি। এখনো পরিবর্তনের সুযোগ আছে। সে সময়ে অন্তত এটি পরিবর্তন করা উচিত।

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র ও বিদ্যুৎ বিলে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তেরও কোনো দরকার ছিল না। কারণ টিআইএন সবার থাকে না। বিত্তবান ও মধ্যবিত্তদের থাকে। গরিবদের থাকে না। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্র ও বিদ্যুৎ বিল দুই ক্ষেত্রেই টিআইএনের পরিবর্তে এনআইডি বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর বর্ধিত উৎসে কর বহাল থাকার ফলে চাকরিজীবী নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ বাড়ল। পেনশনাররা যাঁরা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল তাঁরা আরো বেকায়দায় পড়লেন। এ সিদ্ধান্ত ঠিক হলো না। যে কারণে এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হচ্ছে অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে আনা—এটি অন্যভাবেও করা যায়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক ডিজি তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাজেট পাসের আগে এখনো অনেক কিছু পরিবর্তনের সুযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছা করলেই সেটা পারেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের অন্যতম ভরসাস্থল সঞ্চয়পত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপের কোনো দরকার ছিল না। যাঁরা অবসরে আছেন এ হস্তক্ষেপে তাঁদের অনেক সমস্যা হবে। অনেক মন্ত্রীই সঞ্চয়পত্রের বর্ধিত উৎসে কর চান না। তা ছাড়া সঞ্চয়পত্র তো সবার জন্য নয়। এখানে যাতে ধনীরা বিনিয়োগ না করতে পারে সে জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলক ঠিক আছে। অনেকেই কর দেয় না।