রিফাত হত্যাকাণ্ডের সময় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো দর্শক নয়!
বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনেই রিফাত শরীফ (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার সময় পাশেই দাঁড়িয়েছিলো বেশ কয়েকজন ছেলে। কিন্তু তারা কেউ দর্শক ছিলো না, তারাই প্রথমে হামলা করেছিলো নিহত রিফাতের উপর। এরকমটাই দাবি করছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে সাংবাদিকদের কাছে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এরকমটাই বলেছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে মিন্নি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কলেজ দিয়ে বের হইছি, ও (রিফাত) আমার সঙ্গে ছিল। তখন কিছু পোলাপান আইসা কী জানি বলা শুরু করছে, ‘গালি দিছো ক্যান, গালি দিছো ক্যান? এ রকম জানি কী…। পরে আরও দু-তিনটা ছেলে আইসা কোপান শুরু করছে। আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।
এছাড়াও মিন্নি আরও বলেন, ভিডিওতে যাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ছেলেগুলো দর্শক নয়, মূলত তারাই প্রথমে রিফাত ও আমার পথ আটকে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিন-চারজন রিফাতকে মারতে শুরু করেছিল। নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করলে তারা পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। এর পর আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও রিফাত শরীফকে বাঁচাতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৬ জুন) নিহত রিফাতের উপর হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সময় রিফাতের সাথেই ছিলেন তার নববধু আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এ সময় তিনি খালি হাতেই খুনিদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে হামলাকারীদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু এত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত স্বামীর মৃত্যু ঠেকাতে পারেননি তিনি।
ওই হত্যাকাণ্ডের সময় আশেপাশে অনেকই ছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যে একজন ঘটনাটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে ভিডিওটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় চারদিকে।
ফেসবুকে পোস্ট করা সেই ভিডিওটিতে দেখা যায়, রিফাতকে যখন সন্ত্রাসীরা এলোপাথারীভাবে কোপাচ্ছিল তখন তাদের খুব কাছেই কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়েছিল। যুবকদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখে সবাই প্রশ্ন তুলেছেন ওই ছেলেগুলো কেন এগিয়ে আসেনি। এছাড়াও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর শরীরী অঙ্গভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। কারণ ঘটনার সময় ছেলেগুলোকে খুব স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এজন্য অনেকের প্রশ্ন, ছেলেগুলো জনসাধারণ হলে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়ত না। হয় রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসত, না হয় ভয়ে পালিয়ে যেত।
এছাড়াও প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের সময় স্ত্রী ছাড়া রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে না আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।