সামরিক সক্ষমতায় শক্তিশালী হচ্ছে ইরান
গত কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের আরকিউ-৪এ গ্লোবাল হক ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো আকাশ থেকে নামানো হয় পেন্টাগনের নজরদারি ড্রোন। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সরাসরি যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা যেমন তুঙ্গে ওঠে, তেমনি ইরানের সামরিক সক্ষমতা বাড়ার বিষয়টিও সামনে আসে।
ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রতিরক্ষা সাময়িকী জেন’স ডিফেন্স উইকলির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা সম্পাদক জেরেমি বিনি সিএনএনকে বলেন, ‘সেগুলো (প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ড্রোন নামানোর ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে ইরানিরা আসলেই বিনিয়োগ করছে, এটা গোনায় ধরতে হবে। বিনির মতে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতার বিষয়টি সামনে এসেছিল। ড্রোন ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষায় এগোনোর বিষয়টিও সামনে এলো।
আরকিউ-৪এ মাটির পায়রা নয়। ১১ কোটি ডলারে নির্মিত একেকটি ড্রোন দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে তিনজনের দরকার পড়ে। বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের পাখার চেয়ে বেশি চওড়া ড্রোনটির রোলস রয়েস ইঞ্জিন আছে। এটি ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে চলে। ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা পেতে এটি ৬৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থান করে। খুব কাছাকাছি এলেও এর রাডার সতর্কতা রিসিভার, জ্যামার ব্যবস্থা আছে। এতকিছুর পরও এ ড্রোনটি ভূপাতিত করা ইরানের নিখুঁত নিশানার একটি আলামত।
বিনির মতে, আকারের দিক থেকে আকাশযানটিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো কঠিন কোনো কাজ নয়।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হলে এমনটিকে (ড্রোন নামানো) বিস্ময়কর মনে করা হতো। কিন্তু এখন তাদের (ইরান) নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অনেক বেশি সম্মোহনী মনে হচ্ছে।’
দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের হুমকিতে না থাকলেও ড্রোন নামানোর মতো ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে, ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দিয়ে বড় কিছু করতে সক্ষম তেহরান। এটি এমন এক শত্রু যারা প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। স্বল্পমেয়াদে প্রচলিত যেকোনো যুদ্ধে ইরানের সঙ্গে জিততে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার যে, ইরানের উদ্ভাবনী দক্ষতা যেকোনো যুদ্ধে সহজে জেতা কঠিন করে ফেলবে।
ঠিক কোন জায়গায় ড্রোনটি নামানো হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ১৯ জুন ভোররাত ৪টা ৫ মিনিটে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) ড্রোনটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ভিডিও প্রকাশ করে প্রমাণ করতে চেয়েছে, ইরানের মূল ভূখণ্ড থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটেছে। তারা বিমান চলাচলের একটি পথ দেখিয়েছে, যাতে বোঝা যাচ্ছে, গুপ্তচর ড্রোনটি কোনোভাবেই ইরানের ভূখণ্ডে যায়নি। বিপরীতভাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটে বলেন, ড্রোনটি খুব ভালোভাবেই ইরানের ভূখণ্ডে ছিল।
আইআরজিসির ভাষ্য, তারা ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা খোরদাদ ব্যবহার করে ড্রোন ফেলেছে। বর্তমানে মনুষ্যবিহীন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে ইরানের সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।