পিইসি পরীক্ষায়ও এখন থেকে থাকছে না জিপিএ ৫

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), এসএসসি ও এইচএসসির পর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং সমমানের পরীক্ষায়ও আর থাকছে না জিপিএ ৫। পিইসি পরীক্ষায়ও এখন থেকে জিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। তবে গ্রেডবিন্যাসের ধরন কেমন হবে-এ সিদ্ধান্তের জন্য এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিপিএ ৪-এর মধ্যে যেভাবে গ্রেডবিন্যাস করবে, সেভাবেই পিইসি পরীক্ষায়ও গ্রেডবিন্যাস করতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘পিইসিতে বর্তমানে যে গ্রেডবিন্যাস রয়েছে, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেডবিন্যাসের সঙ্গে মিল রেখেই করা হয়েছে। তাঁরা গ্রেডবিন্যাস নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা কমিটি গঠন করে আমাদের গ্রেডবিন্যাসও পরিবর্তন করব। কারণ একই শিক্ষার্থী পিইসিতে এক ধরনের গ্রেড আবার জেএসসিতে আরেক ধরনের গ্রেড পেতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেডবিন্যাসের সঙ্গে মিল রেখেই পিইসির গ্রেডবিন্যাস হবে।’

এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্ত শিক্ষা সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পর পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫-এর বদলে জিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। জিপিএ ৪-এর মধ্যে এই গ্রেডবিন্যাস অনেকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই করা হয়েছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস নম্বর ৪০ হলেও পাবলিক পরীক্ষায় রাখা হয়েছে ৩৩ নম্বর। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে প্রাপ্ত নম্বরকে দেওয়া হয় জিপিএ ৪। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষায় একে ভেঙে দুটি গ্রেড করা হচ্ছে।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এসএসসি ও এইচএসসির মতো পরীক্ষায় অনেকেই ৯০-এর ওপরে নম্বর পায়। এখন যারা ৮০ পাবে আর যারা ৯০ পাবে, সবাই যদিই একই গ্রেড পায়, তাহলে মূল্যায়নটা যথাযথ হয় না।

প্রস্তাবিত একটি পদ্ধতিতে ৯০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বরকে ‘এক্সিলেন্ট’ লেটার গ্রেড হিসেবে রাখা হয়েছে, যার গ্রেড পয়েন্ট হবে ‘জিপিএ ৪’। আর ৮০ থেকে ৮৯ নম্বরকে রাখা হয়েছে ‘এ প্লাস’ গ্রেডে, যার গ্রেড পয়েন্ট হবে ‘জিপিএ ৩.৮৫’।

এরপর মূলত ৫ নম্বরের ভিত্তিতে লেটার গ্রেড পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে ৭৫ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে লেটার গ্রেড ‘এ’ এবং গ্রেড পয়েন্ট জিপিএ ৩.৭৫; ৭০ থেকে ৭৪ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘এ মাইনাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০; ৬৫ থেকে ৬৯ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘বি প্লাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ৩.২৫; ৬০ থেকে ৬৪ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘বি’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ৩.০০; ৫৫ থেকে ৫৯ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘বি মাইনাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ২.৭৫; ৫০ থেকে ৫৪ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘সি প্লাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ২.৫০; ৪৫ থেকে ৪৯ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘ডি’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ২.২৫; ৪০ থেকে ৪৪ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘ডি মাইনাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ২; ৩৫ থেকে ৩৯ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘ই’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ১.৭৫; ৩৩ থেকে ৩৪ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘ই মাইনাস’ এবং গ্রেড পয়েন্ট ধরা হয়েছে ১.৫০। আর শূন্য থেকে ৩২ নম্বরের লেটার গ্রেড ‘এফ’, যা ফেল হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে অন্য প্রস্তাবে ‘এক্সিলেন্ট গ্রেড’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’ গ্রেড নিয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে ফল প্রকাশ করতেই গ্রেডিং পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। সাধারণত আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন বিদেশে পড়তে বা চাকরি করতে যায় তখন আমাদের ফল বা গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এমন কোনো গ্রেডবিন্যাস যাতে না করা হয়, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মেলে না। তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রাখার পাশাপাশি গ্রেডবিন্যাস যাতে লজিক্যাল হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখছি। চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ অথবা আগামী সপ্তাহে আমাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। আগামী জেএসসি পরীক্ষা থেকেই আমার নতুন গ্রেডবিন্যাসে ফল প্রকাশ করতে চাই।’