বিদ্রোহীদের দমনে শত শত একর জমির ধান পুড়িয়ে দুর্ভিক্ষ আনছে সিরিয়া
কৃষকরা বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা ও সুরক্ষা দিচ্ছে- এ অভিযোগে ফসল তোলার মুখে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যুদ্ধবিমান থেকে ফসফরাস বোমা ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শত শত একর জমির ধান। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের দক্ষিণে গ্রামাঞ্চল খান শেইখুনের কৃষক ওয়াসেল নাজিমের চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল চার একর জমির গম আর ১০ একর বার্লি। এভাবে দেশের জনগণকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের দিকে।
বিদ্রোহীদের হাত থেকে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে এটাকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার। শুধু সিরিয়াতেই নয়, ন্যক্কারজনক এ ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পাশ্ববর্তী ইরাকেও।
পরাজয়ের মুখে মাঠের পর মাঠ জ্বালিয়ে দিচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও। সোমবার মিডিল ইস্ট আই ও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সিরিয়ায় গত আট বছরের যুদ্ধে জয়ের পথে প্রেসিডেন্ট আসাদ। ২০১৫ সালে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে গত তিন বছরে দেশের ৯০ ভাগ অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে সরকারি বাহিনী। তবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ ইদলিব এখনও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আল কায়দার পুরনো শাখা হায়াত তাহরির আল শামর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত বছরের শেষদিকে লড়াই জোরদার হলেও চলতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে বড় অভিযান শুরু করে রুশ ও আসাদের বাহিনী।
সেই থেকে চলছে একের পর এক বিমান হামলা। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-হাসপাতাল কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না হামলা থেকে। সেই সঙ্গে টার্গেট করে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গম ও বার্লির ক্ষেত।
জাতিসংঘের রিপোর্ট মতে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে গত দুই মাসে প্রায় ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন। হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে তুর্কি সীমান্তের দিকে পালিয়ে গেছেন ১০ লাখ বাসিন্দার এক-চতুর্থাংশই। তবে সিরিয়া ও রাশিয়ার সরকার স্থানীয় নাগরিকদের টার্গেট করার কথা অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীমুক্ত করতে ইদলিবেই হামলা চালানো হচ্ছে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় অধিকারকর্মীরা বলছেন, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়াজুড়ে কৃষকের অসংখ্য ফসলের ক্ষেতের ওপর ফসফরাস বোমা ফেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সিরীয় ও রুশ যুদ্ধবিমানগুলো।
ইদলিবের হামা এলাকার কৃষক আবু নিদাল বলেছেন, আমার শহরে চব্বিশ ঘণ্টা নিয়ম করে বোমা ফেলা হচ্ছে। এসব বোমায় ক্ষেতে আগুন ধরে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগুন ধরে গেলে তা নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন হতভাগা কৃষকরা। এ দৃশ্য সত্যিই হৃদয়বিদারক।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মে মাসের শুরু থেকে সিরিয়ার ইদলিবে অন্তত ২০ হাজার একর ফসলের ক্ষেত পুড়ে গেছে। অন্যদিকে পার্শ^বর্তী ইরাকে ১ লাখ ৩৪ হাজার একর জমিতে আগুন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার একর জমির ফসল একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বেশিরভাগই আইএসের কাজ। বিশ্লেষকরা তেমনটাই বলছেন। সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড সিকিউরিটির গবেষক পিটার সোয়ার্জস্টেইন বলেন, পরাজয়ের মুখে আবাদি জমি পুড়িয়ে তামা করার কৌশল নিয়েছে আইএস। তাদের যুক্তি, আমরা যদি এ মাটি না পাই, অন্য কাউকে পেতে দেব না।