দেবীগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ময়নামতি চর!
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়ার তীর ঘেঁষে অবস্থান করছে ময়নামতি চর। গাছের সবুজ আর স্নিগ্ধ বাতাসের উপস্থিতি নিরিবিলি এই স্থানটিকে দেবীগঞ্জে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত ময়নামতি চর। এর উত্তরে রয়েছে চা বাগান, পশ্চিমে করতোয়া নদী, পূর্বে বসতি আর দক্ষিণে আবাদি জমি।
২০১৭ সালে ময়নামতি চরে দশম জাতীয় রোভারমুট ও কমডেকা আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বন বিভাগ চরের সৌন্দর্য বর্ধনে শিশু, আকাশমনি, দেশি কড়াই, আমলকি, মেহগণি, আম, জাম, কাঁঠাল, বেল সহ নানা জাতের ২০ হাজার গাছ রোপণ করেছিল। সময়ের ব্যবধানে সেগুলো এখন পূর্ণ বয়স্ক হয়ে চরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। হাঁটার জন্য বাগানের ভেতরের কংক্রিটের আঁকাবাঁকা রাস্তা আর বাগান থেকে সবুজের সান্নিধ্যে নদী পাড়ের দৃশ্য দেখতে তৈরি করা সিমেন্টের বেঞ্চগুলো এখানে ঘুরতে আসা প্রকৃতি প্রেমীদের ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কিন্তু জন গুরুত্বপূর্ণ ময়নামতি চর তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে চরম অবহেলায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতি বছর করতোয়ার বুকে বিলীন হচ্ছে ময়নামতি চর, উপড়ে পড়ছে মূল্যবান গাছ। বন বিভাগ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বাগানটি রক্ষায়।
শুধু বর্ষা নয় সারা বছরই চরের পাড় ধসে পড়ছে। কমছে চরের আয়তন। চরের ধস রোধ করতে অনতিবিলম্বে নদীর তীর সংলগ্ন বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনকে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে আসলে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গৃহীত হয় নি।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা বোদা থেকে এখানে ঘুরতে আসা ফয়সাল কাসিফের সাথে কথা হয়। তিনি জানান প্রায় ২ বছর পর বেড়াতে এসেছেন ময়নামতি চরে। কিন্তু চরের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে বেশ নাখোশ তিনি। আশঙ্কা করেছেন জরুরি পদক্ষেপ না নিলে হয়তো কয়েক বছরে বাগানটি করতোয়ায় বিলীন হয়ে যাবে।
বগুড়া থেকে ডোমারে নানা বড়িতে ঘুরতে আসা মিসবাউল মিফতাহ জানান, নানা বাড়িতে আসলেই মামাতো ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে ময়নামতিতে বেড়াতে আসেন তিনি। গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত আসছেন এখানে। তবে পূর্বে তুলনায় এখন বাগানের আয়তন কমতে দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। স্থানীয়দের চরটি রক্ষায় আরো জোরালো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন আছে যোগ করেন মিফতাহ।
নদীতে বাঁধ নির্মাণের বিষয় কথা হয় পঞ্চগড় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজার সাথে। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এর বরাত দিয়ে জানান, ২০১৭ সালে আমরা জরিপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সেই অর্থ বছরে বরাদ্দ না থাকায় সেটি আর সম্ভব হয় নি। তবে বাঁধ নির্মাণের জন্য স্থান পরিদর্শন, সম্ভাব্য ব্যয় সহ সকল প্রক্রিয়া যাচাই বাছাই এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সার্ভে শেষ হলে টেকনিক্যাল কমিটিতে তা বিষয়টি আলোচিত হবে। রেলপথ মন্ত্রী অ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে কথা বলেছেন তিনি জানান। সব ঠিক থাকলে আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাঁধ নির্মাণ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মি. প্রিন্স বলেন, বর্ষা মৌসুমে চরের ভাঙ্গনের বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
ময়নামতি চরের বাগানটি রক্ষায় বন বিভাগের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা বন কর্মকর্তা মো. আলী কবীর জানান, ইতিপূর্বে ভাঙ্গনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তবে নদী ভাঙ্গন ঠেকানোর বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তবে এখনো তেমন তেমন সাড়া পাওয়া যায় নি।
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি