হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ, ভাঙতে পারে অতীতের রেকর্ড

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। শনিবার (২৫ মে) ভোর থেকেই কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছের ডিম আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহে ব্যস্থ সময় পার করছেন।

শুক্রবার (২৪ মে) রাত থেকে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ শুরু হলে বিশ্বের একমাত্র মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর পাড়ে অবস্থান নেন ডিম আহরণকারীরা। তখন থেকেই উৎসবের আমেজ দেখা গেছে ডিম আহরণকারীদের মাঝে। বর্ষণের ফলে হালদার সঙ্গে সংযুক্ত খাল, ছরা ও নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়।

আর শনিবার ভোর থেকেই কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছের ডিম সংগ্রহে নেমে পড়ে তারা।

জানা যায়, সাধারণত, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রবল বর্ষণ হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় ঢলের প্রকোপ হয়নি। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে নদীতে মা মাছ নগণ্য পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল। মা মাছ সাধারণত অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে।

গংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৩৬৮ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

চলতি বছরে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মা মাছ সংরক্ষণ, ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়া সংস্কার, কুয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ডকে এবার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে হালদায় জেলেদের ডিম সংগ্রহে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানে শনিবার ভোর থেকেই ডিম সংগ্রহকারী জেলেদের সাথে সময় কাটিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। তিনিও মনে করেন, পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিম সংগ্রহে।

তিনি বলেন, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আর তাই ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হালদা রক্ষায় মাঠে আছি। ডিম যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘোষণা দেওয়া হয় নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা না চালানোর। এর পরও কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়েছে, অভিযান চালিয়ে সেই নৌকা জব্দ করে ইঞ্জিন পুরিয়ে দেয়া হয়, ধ্বংস করা হয় নিষিদ্ধ জাল। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়াগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিই।

তিনি বলেন, গত ৮ মাস হালদার পাড়ে থেকেছি, হালদা পাহারা দিয়েছি, দিন রাত এক করেছি, ৫৭টি হ্যাচারি তৈরি করেছি। ভাল কিছু তো আশা করতেই পারি। বাকিটা আল্লাহর হাতে।