শিশু অপহরণ মামলায় ২ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনের যাবজ্জীবন

রাজধানীতে টিএনজেড গ্রুপের মালিকের ছেলে শিশু আবিরকে (০৮) অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলার আট আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব আসামিকেই জরিমানা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক খাদেম উল কায়েস এ রায় দেন।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- মশিউর রহমান মন্টু এবং মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বর।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন- সজীব আহম্মেদ, আলিম হোসেন চন্দন, রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইকবাল হোসেন শুভ, কাউছার মৃধা ও রেজা মৃধা।

এছাড়া খালাস পাওয়া দুই আসামি হলেন- জহিরুদ্দিন বাবর ও শাহ অলিউল্লাহ। দণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে কাউসার ও রেজা পলাতক। আদালতে রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ আট আসামি উপস্থিত ছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২ মে আবির গাড়িতে করে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে অপহরণকারীরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। একইসঙ্গে আবিরের গাড়ির চালক এবং তত্ত্বাবধানকারীকেও অপহরণকারীরা নিজেদের গাড়িতে তুলে নেন।

প্রথমে শিশুটিকে তারা আশ্বস্ত করেন, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অপরাধীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে এসেছেন। এরপর শিশুটিকে নিয়ে তারা রাজধানীর পল্লবীর ভাড়া বাসায় চলে যান। পরে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শিশুটি কাঁদতে শুরু করে। এ সুযোগে অপহরণকারীরা শিশুটির বাবাকে ফোন করে তার কান্নার শব্দ শোনান। তার মুক্তিপণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। শুরু হয় দর-কষাকষি। এছাড়া ওই রাতেই শিশুটিকে বহনকারী গাড়িটি চালক ও তত্ত্বাবধানকারীসহ বিমানবন্দর এলাকায় ফেলে আসেন অপহরণকারীরা।

পরে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরে পান ব্যবসায়ী বাবা।

এদিকে, অপহরণের ১২ দিন পর অভিযান চালিয়ে জড়িত পাঁচজনকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। একইসঙ্গে তারা মুক্তিপণের টাকার মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকাও উদ্ধার করে। একপর্যায়ে তাদের দেওয়া তথ্যমতে বাকিদেরও আটক করা হয়।

পরে ২০১৫ সালের ১৮ মে এ ঘটনায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর থানাটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদার ১২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এছাড়া মামলার কয়েক আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।

৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার মামলাটির রায় দেন। এসময় ঘটনার সঙ্গে দুই আসামির সংশ্লিষ্ট প্রমাণ না পেয়ে তাদের খালাস দেন আদালত।