উলিপুরে উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়ে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়ার চার বছর পরও নতুন ব্রিজ নির্মাণ বা সংস্কার হয়নি। নির্মাণ কাজের ত্রুটি সম্পর্কে তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চুড়ান্ত বিল প্রদান করেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই এলাকার সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্দোগে ব্রিজের দুই ধারে কাঠের সাঁকো বানিয়ে কোন রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রেখেছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বুড়াবুড়ি বাজার হতে বোতলা জনতারহাট গামী রাস্তায় সাকোরপাড় এলাকায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীন রাস্তায় ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফিট দৈর্ঘ্যরে ব্রিজ নির্মাণের কাজ পান মেসার্স হামিদ ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ওই বছরের এপ্রিলে তা সমাপ্ত করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যথাযথ নজরদারির অভাবে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়ে। এরপর দীর্ঘ চার বছরেও নতুন ব্রিজ নির্মাণ বা সংস্কার হয়নি। এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন।

এলাকাবাসী সফিকুল ইসলাম (৩৮), আব্দুল হামিদ (৫৫), দুদু মিয়া (৪২), গাজীউর রহমান (৬৫), আলাপ মন্ডল (৬০)সহ অনেকেই জানান, ব্রিজটি নির্মাণের সময় ঠিকাদার নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে। ওই সময় এলাকাবাসী আপত্তি জানালেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় বুড়াবুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, জনতার হাট উচ্চ বিদ্যালয়, মুসল্লিপাড়া রাবিয়া দাখিল মাদরাসা, আনোয়ারা আব্দুস সামাদ মাদরাসা, খারিজা খামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দোলন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়াবুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পানাতি পাড়া, আগগ্রাম, বানিয়াপাড়া, পাইকারপাড়া, তেলীপাড়া, কানিপাড়া, বোতলা, দোলন, নেলর গ্রাম, কুড়ারপাড়, মিয়াপাড়া, ফকির মোহাম্মদ, পাঁচগ্রাম, মকপাড়া, ঝাঁকুয়াপাড়া, বটতলি নদীরপাড়সহ ২০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দূর্ভোগে পড়েছেন। তারা আরও বলেন, স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্দোগে ব্রিজের দুই ধারে কাঠের সাঁকো বানিয়ে কোন রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করলেও প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাঁঠের সাকো পিচ্ছিল হওয়ায় চলাচলকারী শিশু ও বৃদ্ধদের পড়তে হয় বিপদে ।

বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক বলেন, উপজেলার মাসিক সভায় ব্রিজটি নতুন করে নির্মানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি।

মেসার্স হামিদ ট্রেডার্সের স্বত্ত্ব¡াধিকারী আব্দুল হামিদ ব্রিজটি উদ্বোধনের পূর্বেই ভেঙ্গে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বন্যার কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। কাজ করেছি, বিল নিয়েছি। এখানে উদ্বোধনের কি আছে। নি¤œ মানের কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ সঠিক ভাবে করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন।

ব্রিজটি নির্মাণের সময় দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আনিছুর রহমান (বর্তমানে গাইবান্ধা সদরে কর্মরত) এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই সময় বন্যার কারনে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাস্তবে ব্রিজটি আকারে বড় হওয়ার দরকার ছিল কিন্তু তৎকালীন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের চাপে ৩৬ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নি¤œমানের কাজের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই এলাকার লোকই ঢালাই করেছে। কাজের মানের ব্যাপারে কোন আপোষ করা হয়নি। উদ্বোধনের আগেই চুড়ান্ত বিল প্রদান করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর বিষয়টি সামনে আনলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা ছিল। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ার পর কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এর উত্তরে তিনি বলেন, ব্যাপারটা কনসিডার (বিবেচনা) করলে ভালো হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক, ব্রিজটির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হবে।

আসলাম উদ্দিন আহম্মেদ, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি