শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলা, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯০

আজ সকালে শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল ওই ঘটনায় ২০ জন মারা গেছে। তারপর বলা হয় ৭৯ জন নিহত হয়েছে। আর সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় হাসপাতালের পরিচালক অনিল জয়সিংহে জানান, ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৯০ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী কলম্বোতে ৪৯, রাজধানীর অদূরে অবস্থিত নিগোম্বোতে ৬৭ এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বাট্টিকোলাতে ২৭ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, দেহিওয়ালা নামের চিড়িয়াখানার বিপরীত পাশের একটি হোটেলে কিছুক্ষণ আগেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে ওই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।  নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

আজ রবিবার সকালে দেশটির রাজধানী কলম্বোর উত্তরাঞ্চলের গির্জা ও নিকটবর্তী নেগোম্বা শহরের গির্জা এবং আশপাশের কয়েকটি হোটেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

রবিবার খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে। প্রার্থনার জন্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা গির্জায় জড়ো হতে থাকেন। এর মাঝেই এ হামলা চালানো হয়েছে।

হামলার পর কলম্বোর কাটুয়াপিটিয়ার সেন্ট সেবাস্টিন গির্জার ফেসবুক পেজে বলা হয়, আমাদের গির্জায় বোমা হামলা হয়েছে। এখানে যদি আপনার পরিবারের সদস্য থাকেন তাহলে আসুন, তাদের পাশে দাঁড়ান।

তবে হামলার ধরন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়নি। প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে রাজধানীর একটি গির্জায়। প্রায় আধঘণ্টা পরে পরবর্তী হামলাগুলো ঘটে।

এখন পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ দায় স্বীকার করেনি। হামলার শিকার তিন হোটেল এবং একটি গির্জা রাজধানীতে হলেও বাকিগুলো নিগমবো ও উত্তর কলম্বোয় অবস্থিত। এসময় হাজার হাজার লোক ইস্টারের প্রার্থনারত ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল পৌনে নয়টার এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯০ জন নিহত ও আরও ৪০০ শ’র অধিক আহত হয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১০০ জন নিহত ও আরও চার শতাধিক আহত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হোটেল ও গির্জাসহ ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন শতাধিক মানুষ আহত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রোববার সকালের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক নিহত এবং ৪০০ শ’র অধিক আহত হয়েছেন।

যে তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কোচকিকাদে, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এসব গির্জায় ইস্টার সানডে উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল।

তাছাড়া রাজধানীর সাংগ্রি লা, দ্য কিন্নামোন এবং কিংসবারি নামক আরও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হোটেল তিনটি রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

নিগমবো অঞ্চলের কাতাওয়াপিতিয়ায় সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জার ভেতরে বিস্ফোরণে ধ্বংসের ছবি দেখা গেছে এটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এতে গির্জার ফ্লোরে রক্ত বয়ে যেতে দেখা গেছে। আক্রান্তদের সহায়তা সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা একটি পোস্টে লেখা রয়েছে, আমাদের গির্জায় একটি বোমা হামলা হয়েছে। যদি আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ সেখানে থাকেন, দয়াকরে এগিয়ে আসুন এবং সাহায্য করুন।

হতাহতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন বলে দেশটির স্থানীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রীলংকায় কেবল ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী।

এ হামলার ঘটনার পর শ্রীলংকার সরকার ইতিমধ্যে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক মন্ত্রী হার্শা ডি সিলভা বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

তিনি বলেন, আমি মানুষের মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। বিদেশি নাগরিকসহ বহু লোক এতে হতাহত হয়েছেন। দয়া করে সবাই ঘরের ভেতরে ও শান্ত থাকুন।