শ্রীলঙ্কায় আগামি দুইদিন কারফিউ জারি, বন্ধ ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ তিনটি গির্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে কয়েক দফা বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৯০ জন দেশ-বিদেশের নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক নাগরিক। এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় লঙ্কান প্রেসিডেন্ট এর নির্দেশে আজ বিকাল ৬টা থেকে আগামীকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া আগামীকাল ২২ এপ্রিল ও পরশু ২৩ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারির দপ্তর থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ পর্যন্ত এই বোমা হামলার দায় কোনো পক্ষ স্বীকার করেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই হামলার পেছনে আইএস ফেরত একটি গ্রুপ থাকতে পারে।

জানা গেছে, রাজধানী শহর কলম্বোর কচ্চিকাডের সেন্ট অ্যান্থনি গির্জা, নিগাম্বোর সেন্ট সিবাস্তিয়ান গির্জা ও কাটানা শহরের কাটুওয়াপিটিয়ার একটি গির্জায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজধানীর শাংরি লা হোটেল, সিনামন গ্রান্ড ও কিংসবুরি পাঁচ তাঁরা হোটেলেও বিস্ফোরণ হয়েছে।

তবে হামলার ধরন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়নি। প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে রাজধানীর একটি গির্জায়। প্রায় আধঘণ্টা পরে পরবর্তী হামলাগুলো ঘটে।

কলম্বোর জাতীয় হাসপাতালের পরিচালকের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এছাড়াও চারশতাধিক লোক এ বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।

এখন পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ দায় স্বীকার করেনি। হামলার শিকার তিন হোটেল এবং একটি গির্জা রাজধানীতে হলেও বাকিগুলো নিগমবো ও উত্তর কলম্বোয় অবস্থিত। এসময় হাজার হাজার লোক ইস্টারের প্রার্থনারত ছিলেন।

খবরে বলা হয়েছে, কলম্বোর কোচচিকাদো অঞ্চলের সেন্ট অ্যানথনি এবং রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নিগমবোতে সেন্ট সেবাস্তিয়ান ও আড়াইশ কিলোমিটার দূরে আরেকটি গির্জায় হামলা হয়।

সূত্র জানায়, উদ্ধারকারীরা হতাহতদের নিরাপদ জায়গা সরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

নিগমবো অঞ্চলের কাতাওয়াপিতিয়ায় সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জার ভেতরে বিস্ফোরণে ধ্বংসের ছবি দেখা গেছে এটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এতে গির্জার ফ্লোরে রক্ত বয়ে যেতে দেখা গেছে। আক্রান্তদের সহায়তা সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা একটি পোস্টে লেখা রয়েছে, আমাদের গির্জায় একটি বোমা হামলা হয়েছে। যদি আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ সেখানে থাকেন, দয়াকরে এগিয়ে আসুন এবং সাহায্য করুন।

হতাহতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন বলে দেশটির স্থানীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রীলংকায় কেবল ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী।

এ হামলার ঘটনার পর শ্রীলংকার সরকার ইতিমধ্যে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক মন্ত্রী হার্শা ডি সিলভা বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

তিনি বলেন, আমি মানুষের মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। বিদেশি নাগরিকসহ বহু লোক এতে হতাহত হয়েছেন। দয়া করে সবাই ঘরের ভেতরে ও শান্ত থাকুন।