থানার সামনেই বাদীর মেয়ে আসামিদের মারধরের শিকার

বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে এজাহারভুক্ত আসামিদের মারধরের শিকার হয়েছেন মামলার বাদীর মেয়ে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানা প্রধান ভবনের সম্মুখে এই ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনায় নতুন আরেকটি মামলা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ হামলাকারীদের আটক করলেও কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি প্রথমে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণও করতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ একটি মহলের চাপে গভীর রাতে মামলাটি গ্রহণ করে।

এক্ষেত্রে অবাক করা বিষয় হচ্ছে- মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে থানা থেকে ২৫০ মিটার দূরত্বে সদর রোডের কাছাকাছি। তবে ঘটনাস্থল অন্য স্থান অর্থাৎ থানার বাইরে দেখানো নিয়ে মামলার বাদী নাজনীন নাহার পলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তিনি পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নতুন মামলার বাদীর বড় বোন পপি বেগমের অভিযোগ, হামলাকারী মাইনুল ইসলাম স্বপনের (৩৫) সাথে শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের একখন্ড সম্পত্তি নিয়ে তাদের বিরোধ রয়েছে। সেই ঘটনায় তাদের পক্ষ থেকে দায়ের করার একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু ওই মামলার আসামি স্বপনসহ ৪ জন জামিনে মুক্ত হয়ে তাদের হয়রানি করছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে পূর্বের মামলাটির বাদী অর্থাৎ তার মা নুরুন্নেছা বেগমের বাসায় আসামিরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এই বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এসআই আল আমিন। কিন্তু এই ঘটনায় পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং পরবর্তীতে তিনি ফোন দিয়ে সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে ওসির মধ্যস্ততায় হামলাকারীদের সাথে বসার প্রস্তাব দেন।

থানা কম্পাউন্ডে মারধরের শিকার মামলাটির বাদী নাজনীন নাহার পলি জানান, পুলিশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তিনি বড় বোন পপি বেগমকে নিয়ে রাতে থানায় যান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার কারণে তখন ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী যেকোন দিন বসার অনুরোধ করেন।

এই বিষয়টি ডিউটি অফিসার ওসি নুরুল ইসলামকে অবহিত করার সাথে সাথে থানার ভেতরেই মামলার আসামিরা বাদীর স্বজনদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন অপরাপর পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ডিউটি অফিসারের রুম থেকে বেরিয়ে থানা ভবনের সিঁড়িতে নামলে কথা কাটাকাটির জেরে মাইনুল ইসলাম স্বপনসহ আরও দুইজন তাদের ওপর হামলা করে।

এই ঘটনায় থানার গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা হামলাকারী স্বপনকে আটক করলেও আনুমানিক ২০ মিনিট পরে ছেড়ে দেন। তখন বিষয়টির প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি এই ঘটনায় একটি মামলা গ্রহণ করতে চাইলে পুলিশের ওসি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে থানা থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে অভিযোগ দিতে বলে।

তিনি অভিযোগ করেন, এজাহারে তিনি ঘটনাস্থল থানার সামনে লিখতে বললেও পুলিশ শোনেনি। বরং তাদের ইচ্ছেমত থানা কম্পাউন্ডের বাইরে অর্থাৎ ২৫ মিটার দূরে সদর রোডস্থ লাইন রোডের মুখে ঘটনাস্থল দেখিয়েছে। থানা কম্পাউন্ডে বাদীর স্বজনদের ওপর হামলার ঘটনা পুলিশের দুর্বলতা প্রকাশ পায় মনে করে পুলিশ এমনটি করেছে বলে অভিযোগ বাদীর।

তবে এই হামলার ঘটনায় হামলাকারীকে আটকের পরে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে কোতায়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলছেন, থানা কম্পাউন্ডে নয়, অদূরে এক তরুণী মারধরের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনায় একটি অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখন আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজও করেছে।