সুযোগ পেয়ে পালিয়েছে নুসরাত হত্যা মামলার পাঁচ আসামিসহ অভিযুক্তরা
ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পাঁচ আসামিসহ অভিযুক্তরা সুযোগ পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এখন পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হন্যে হয়ে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এদিকে রাফির মৃত্যুর পর নিয়মানুযায়ী হত্যাচেষ্টার মামলার সঙ্গে হত্যার ধারা যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করছেন পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। সব শেষ গতকাল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) এস এম সিরাজ উদ দৌলার ভায়রার মেয়ে (আলিম পরীক্ষার্থী) উম্মে সুলতানা পপি এবং সিরাজের ঘনিষ্ঠ ছাত্র জোবায়ের আহমেদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পিবিআইয়ের ফেনীর পরিদর্শক মো. মোনায়েম মিয়া গতকাল বলেন, মামলাটির সব নথিপত্র ও আসামিদের আমরা বুঝে নিয়েছি। পরিদর্শক শাহ আলম তদন্ত করছেন। আমরা পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। বাকি চারজনকে পরে আনা হবে। জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নতুন আর কাউকে আটক বা গ্রেফতার করিনি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, গত বুধবার আসামি জোবায়ের ও পপিকে গোনাগাজী আমলি আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। গতকাল চিফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালত দুই আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এখন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, সিরাজের সহযোগী মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক আফছার উদ্দিন, আলিম পরীক্ষার্থী হাফেজ আরিফুর রহমান, মাদরাসার ছাত্র ও সহযোগী নূর হোসেন, আলাউদ্দিন, শহিদুল ইসলাম; সাবেক ছাত্র ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের গুণবতী শাখার কর্মকর্তা কেফায়েত উলাহ জনি, জোবায়ের আহমেদ ও পপি।
এখনো অধরা আছে দ্বিতীয় আসামি ও ফাজিল শ্রেণির ছাত্র নূর উদ্দিন, তৃতীয় আসামি ও কথিত ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শামীম; চতুর্থ আসামি ও পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদ আলম; ৫ নম্বর আসামি ও চিহ্নিত মাদক কারবারি রহমত উল্লাহর ছেলে জাবেদ হোসেন; সাত নম্বর আসামি ও হেফজখানার ইনচার্জ হাফেজ আব্দুল কাদের। এ ছাড়া ফেনী কলেজের ছাত্র (মাদরাসার সাবেক ছাত্র) মহিউদ্দিন শাকিল ঘটনার পর রাফির পরিবারকে হুমকি দেওয়ায় তাকেও খুঁজছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার পরও নূর উদ্দিন, মাকসুদ আলম, শামীমসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা সোনাগাজী শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়েছে। সময় পেয়ে তারা দু-তিন দিন পর গা ঢাকা দেয়। ঘটনার দিন (৬ এপ্রিল) সকালে নূর উদ্দিনকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ভেতরে ও বাইরে দেখা গেছে।
রাফির সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি বলেছে, ‘রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার কিছু সময় আগেও পরীক্ষাকেন্দের মধ্যে নূর উদ্দিনকে দেখেছি। আমি এটা পুলিশকেও বলছি।’
জানতে চাইলে মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা, সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। তিনজন এজাহারনামীয় আসামিসহ ৯ জনকে ধরা পড়েছে। অন্য আসামিরা আগেই পালিয়েছে। আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না।’
প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা ঘটনায় তার ভাইয়ের দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তভার গত বুধবার পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউ-ই বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না। পিবিআই তদন্ত করছে, দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।