আগুনের খবর দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে জানান কিরণ

বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে ঠিক বিপরীত পাশের এসএমসি ভবনে ডেস্কে বসে কাজ করছিলেন মাহমুদুল হক কিরণ। এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। ডেস্কের পর্দা সরানো থাকায় হঠাৎ বাইরে যেতেই দেখতে পান ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে প্রথম আগুনের খবর জানান তিনি।

মাহমুদুল হক কিরণ বলেন, ফোন রিসিভ করে অপর প্রান্ত থেকে ভবনের ঠিকানা জানতে চান। জানানোর প্রায় ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তবে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয় আরও অনেক পরে।

আগুনের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে কিরণ বলেন, আগুন আর ধোঁয়ার তাপে ভবনের ফাইবার গ্লাসগুলো ভেঙে ভেঙে নিচে পড়ছিল। তাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে ঝুলে নিচে নামার চেষ্টা করেন। নিচে নামার সময় হাত ফসকে পড়ে যান কয়েকজন।

লিংক থ্রি ইন্টারনেটে কাজ করা কিরণ আরও বলেন, চোখের সামনে মানুষের এমন বাঁচার আর্তনাত দেখে সহ্য করা যায় না। ভবনে আটকে পড়া মানুষ বাঁচার জন্য শুধু আকুতি করছিল।

সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৪ জনকে, এরমধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন ২ জনকে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৪২ জনকে, এরমধ্যে এক শ্রীলংকার নাগরিককে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৫ জনকে, এরমধ্যে মৃত ঘোষণা করা হয় ৩ জনকে। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মোট নিহতের সংখ্যা ১৯ জন। এছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৭০ জন।

সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, এ ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দুজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং ঘটনাস্থলে ১৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭০ জন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা গেছেন আমেনা এবং বনানী ক্লিনিকে মারা গেছেন পারভেজ সাজ্জাদ নামে আরও দুজন। এই হিসাবে মোট মৃতের সংখা দাঁড়ায় ২১ জনে।

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ আল ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল্লাহ আল ফারুকের শরীরের শতকরা ৯০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। এছাড়া আবু হোসেন ও রেজাউল আহমেদ নামে দুইজনকে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত নিহত ৭ ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), আমেনা ইয়াসমিন (৪০), মামুন (৩৬), শ্রীলঙ্কার নাগরিক নিরস চন্দ্র, আবদুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থাপিত বনানী থানার কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, আমেনা মারা গেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। পারভেজ সাজ্জাদ বনানী ক্লিনিকে, নিরস চন্দ্র কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং মামুন, মাকসুদুর ও মনির ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন আবদুল্লাহ আল ফারুক।

এ দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী রায়ান খান বলেন, আমরা তিন-চারজন নিচে দাঁড়িয়ে নাস্তা করছিলাম। ভবনটির ৯ কিংবা ১০ তলায় দাউ দাউ করে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে দেখি আমরা। অনেককে চিৎকার করে নিচে নামতে দেখি। তখনই আমি ৯৯৯ এ ফোন দেই। পাশাপাশি আরও ২-৩ জন ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট সেখানে উপস্থিত হয়। এর মধ্যে ল্যাডার ইউনিট (বহুতল ভবন থেকে উদ্ধারকারী সিঁড়ি) ও মোটরসাইকেল ইউনিট ছিল।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ভবনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করছেন। ভবনের অধিকাংশ লোকই নিচে নেমে অবস্থান নিয়েছে।

ভেতরে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বহুতল ভবনটির পাইপ বেয়ে অনেককে নিচে নামার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে।