বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবগাঁথা মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবগাঁথা দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। ৪৮ বছর আগের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশবাসীকে।

দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সরকারি ছুটির দিন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গণহত্যায় ঝাপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে।

সেই রাতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দুশো বছরের ব্রিটিশ-বেনিয়া শাসনের অবসানের পর ২৪ বছর ধরে চলে বিজাতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীর শাসন-শোষণ ও আগ্রাসন। ’৪৭-এর দেশভাগের পর উর্দু শাসকদের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান, সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসেছে স্বপ্নের স্বাধীনতা।

আজকের এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। সকালে জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। রাজধানীর বিশেষ বিশেষ ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসটির সূচনা করা হবে। সেই সাথে বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা হবে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের, স্বাধীনতার স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতাদের, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। এসময় সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সম্ভব হলে বাংলাদেশের সাথে একই সময়ে এবং অন্যান্যরা একই দিনে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনসমূহে বৃহদাকারের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।

ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ (অ্যাম্পিথিয়েটার) থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীগণের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশিত হবে।

এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যত্ন কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ বিকাল ২টা হতে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশুকিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।

দিনটি উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি:

আজ সূর্যোদয়ের মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে সকাল ১০টায় শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা।