রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতা

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায়ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চের এই ঘটনার পর কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সজাগ রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানায়, নিউ জিল্যান্ডে মসজিদে মুসলিম বিদ্বেষী হামলার পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও নিরাপত্তা ‘ঝুঁকি চিহ্নিত’ করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাটি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তারপরও ঘটনার পরপরই আমরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় এমনিতেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেখানেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৪৯ জন ইসলাম ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিন জন বাংলাদেশি বলে জানা যায়। হামলায় ক্রাইস্টচার্চের আল  নূর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউডের আরেকটি মসজিদে ৮ জন নিহত হন। এই উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী হামলার সময় আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। মসজিদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে ওই হামলার ঘটনাটি ঘটে। ফলে অল্পের জন্য জীবন রক্ষা পান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

এদিকে, ঘটনার পর ব্রেনটন ট্যারান্ট নামে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দু’বছর ধরে নেওয়া পরিকল্পনার বাস্তবায়নকারী এই বন্দুকধারী হামলার চালানোর আগে অনলাইনে একটি দীর্ঘ বার্তা দিয়েছে। এতে সে হামলার কারণ উল্লেখ করে। সে নিজেকে শ্বেতাঙ্গ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের অনুসরণকারী হিসেবে উল্লেখ করে। ওই বার্তায় মুসলিম বিদ্বেষী বিভিন্ন ধরনের কথাও লিখেছে সে।

হামলার পর উদ্বিগ্ন জনতাগণমধ্যমে ব্রেনটনের এই ভাষ্য আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা রকম প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কেউ বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা করে বসে কিনা, সেই আশঙ্কা থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ ভিজিবল পুলিশিং, টহল, পেট্রোল ও তল্লাশি চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ জানান, ক্রাইস্টচার্চের হামলায় আইডোলজিক্যাল পয়েন্ট থেকে দুটো বিষয় দেখতে পাচ্ছি—  আমরা বলছি, প্রবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ ও ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। একটা মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে, এই ইসলাম বিদ্বেষের কারণে আমরা যেন অন্য ধর্মালম্বীদের প্রতি বিদ্বেষী না হয়ে যাই, সেজন্য সামাজিক সম্প্রীতির ওপর আমাদের জোর দিতে হবে। একটি সহনশীল সমাজ গঠনের  জন্যই এখানে কোনও ছাড় দেওয়া যাবে না। সমাজকে সহনশীল ও সহিষ্ণু রাখতে হবে।