‘একজন ট্রাকচালক হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে শিক্ষা পদক পাব স্বপ্নেও ভাবিনি’

‘একজন ট্রাকচালক হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে শিক্ষা পদক পাব স্বপ্নেও ভাবিনি’। কথাটি বলছিলেন ২০১৯ সালের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে সারাদেশে শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী হিসেবে নির্বাচিত দিনাজপুরের ট্রাকচালক ফারুক হোসেন। দিনাজপুরের এই ট্রাকচালক পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পদক।

বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পদক গ্রহণ করেন ফারুক হোসেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা যায়, সংসারে অভাব-অনটনের জন্য বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি ফারুক। অষ্টম শ্রেণি পাশ করেই শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। পরে ট্রাক চালানো শিখে হয়েছেন ট্রাকচালক। কিন্তু শিক্ষার প্রতি অনুরাগের কারণে নিজের বেতনের ২৫ শতাংশ ব্যয় করেন অসহায়, দুঃস্থ ও শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের জন্য। নিজ বাড়ির আঙিনায় পরিচালনা করছেন বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অবদানের জন্য বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পদক গ্রহণ করেন তিনি।

শিক্ষানুরাগী ফারুক নিজে বিভিন্ন স্কুলে ও পাড়ায়-মহল্লায় গিয়ে হতদরিদ্র ও ঝরে পড়া শিশুদের খুঁজে বের করেন। তাদের লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য বেতনের ২৫ শতাংশ দিয়ে শিক্ষা উপকরণ কিনে বিতরণ করেন। পাশাপাশি তিনি ও তার স্ত্রী সাবেরা আক্তার মিলে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। যার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৯।

ফারুক হোসেনের বাড়ি দিনাজপুরের সদর উপজেলার কাশিমপুর (মালিপুকুর) গ্রামে। তার জন্ম ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ। সদর উপজেলার চেরাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর অভাব অনটনের জন্য আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। এরপর শহরের পুলহাট বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে বস্তা টানার কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে মাস্টাররোলে বিএডিসির ট্রাক সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সালে বিএডিসি’র রংপুর যুগ্ম-পরিচালকের দপ্তরে ট্রাক সহকারী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান।

ফারুক হোসেন বলেন, দরিদ্র বাবা অর্থের জোগান দিতে না পারায় লেখাপড়া করতে পারিনি বেশি। তখনই পণ করেছিলাম আমার মতো কারও যাতে অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ না হয় সেজন্য উপার্জনের একটা অংশ ব্যয় করবো শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের জন্য। ২০০৭ সাল থেকে এই কাজটি করে চলেছি। কোনও স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়, হতদরিদ্র শিশুরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়-সেই চিন্তা থেকেই এটা করছি।

পদক পাওয়ার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ফারুককে চিঠি দিয়ে জানায়।

তিনি বলেন, ‘কখনও কল্পনা করতে পারিনি এরকম কাজ করলে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়। কিছু চাওয়া-পাওয়ার আশায় এই কাজ করিনি। এই স্বীকৃতি আমাকে আরও উৎসাহিত করবে। যতদিন শিক্ষা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া বন্ধ হবে না। ততদিন আমার এই কাজ অব্যাহত থাকবে।’