অগ্নিদগ্ধ লাশ বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বজনদের

রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ যেসব মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে থেকে কিছু মরদেহ শনাক্তের পর তা স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৭৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, বেলা সোয়া দুইটার দিকে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যাদের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে সেগুলো তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। শনাক্ত মরদেহের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও এদিন ৩০-৩৫টি মরদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

চকবাজার থানার এসআই প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠুভাবে লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সহায়তায় কাজটি করছে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

হতাহতের তথ্য সরবরাহে ঢাকা মেডিকেলে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইমরুল হাসান বলেন, মরদেহ সমাহিত করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ১৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান তদারকি দলের প্রধান মেজর শাকিল নওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের মধ্যে ৯ জনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের প্রাণও যায় যায় অবস্থা। এই ৯ জনের মধ্যে আটজনকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে এবং একজনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এই ৯ জনের সবাই গুরুতর দগ্ধ। তাদের সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন।

আইসিইউতে ভর্তি থাকা সোহাগের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আর পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি আটজনের মধ্যে রেজাউল করিমের শরীরের ৫৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। জাকির হোসেনের ৩৮ শতাংশ, মুজাফফর আহমদের ৩০ শতাংশ, আনোয়ার হোসেনের ২৮ শতাংশ, হেলাল উদ্দিনের ১৬ শতাংশ, সেলিমের ১৪ শতাংশ, মাহমুদের ১৩ শতাংশ এবং সালাউদ্দিনের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন জানান, ভর্তি ৯ জনের মধ্যে কারও অবস্থাই ভালো নয়। প্রায় সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে নিহতদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সরিজমিন ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা গেছে, উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর বেশিরভাগই স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কাউকে দেখে শনাক্ত করা কঠিন। তবু এরই মাঝে লাশের ভেতর নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। যদি কাউকে কোনোভাবে শনাক্ত করা যায়।

ঢামেক মর্গে মা খুঁজছেন সন্তানের লাশ। স্ত্রী খুঁজছেন স্বামীকে, সন্তান বাবা-মাকে। স্বজনের লাশের খোঁজে কেউ চিৎকারে ফেটে পড়ছেন। কেউ হয়ে যাচ্ছেন শোকে পাথর। কেউ আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন। সব মিলিয়ে লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। গোটা এলাকায় চলছে এক শোকের মাতম।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও আবারও বেড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ করে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। উদ্ধার অভিযান চলে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ ঘটনায় অন্তত ৭০ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪১ জন।