ঝিনাইদহে হিজড়াদের অভ্যান্তরীন কোন্দলে প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা

ঝিনাইদহে হিজড়াদের অভ্যান্তরীন কোন্দলে টাকা ছিনতাই ও প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টায় ঝিনাইদহ জর্জ কোর্টের সদর বিজ্ঞ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছে হিজড়া সম্প্রদায়। বিজ্ঞ আদালত দন্ড বিধির ৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/১১৪ ধারা মোতাবেক মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্মকর্তা বরাবর মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদাণ করেছেন।

গতকাল ২১ই জানুয়ারি সোমবার ঘটনাটির বিষয়ে দীর্ঘ শুনানী শেষে ঝিনাইদহ জর্জ কোর্টের বিজ্ঞ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতে সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান এই আদেশ প্রদাণ করেন। বাদীর পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী এ্যড. শ্রী গৌতম কুমার বিশ্বাস মামলাটি পরিচালনা করছেন।

মামলার বিবরন ও বাদী বলেন, আমরা হিজড়া সম্প্রদায়ের লোক। আসামী ১। মনোয়ারা হিজড়া, ২। আকাশী হিজড়া ৩। আনোয়ারা হিজড়া সম্প্রদায়ের লোক। আমরা বিভিন্নি এলাকায় গানবাজনা ও নৃত্য পরিবেশন করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিয়া থাকি। হিজড়া আসামীগন এলাকায় গানবাজনা করা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের সহিত বিরোধ করিয়া আসিতেছে এবং সন্ত্রাসী ভাড়া করিয়া আমাদের খুনও জখমের হুমকি দিতে থাকে এবং মাঝে মধ্যে আক্রমন করিয়া থাকে। আসামীগন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহয়তায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের চাঁদা আমাদের নিকট হতে আদায় করিতেছেন। ঘটনার দিন ও সময়ে অর্থাৎ গত ইং- ১৮/০১/১৯ বাংলা ০৫ ই মাঘ ১৪২৫ সাল শুক্রবার রাত অনুমান ৯.০০ ঘটিকার সময় আমি আমার সঙ্গীয় ১নং স্বাক্ষী শিউলি হিজড়া, ২নং স্বাক্ষী লতা হিজড়াসহ কয়েকজন পুরাতন হাটখোলা কালি মন্দিরের সামনে সিড়িতে বসিয়া কথা বার্তা বলাকালে ও টাকা পয়সা ভাগ করা কালে আসামীগন ১০/১২ টি মোটর সাইকেল যোগে হাতে চাপাতি, ডাসা, টাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, লাঠি প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আসিয়া আমাদের ঘিরিয়া ধরে। আসামী মনোয়ারা হিজড়া হুকুম দিয়ে বলে মাগীদের খুন করিয়া আমাদের সাথে বিরোধ করার সাধ মিটিয়ে দে। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে আসামী আরিয়ান হাতে থাকা ডাসা দিয়ে ১নং স্বাক্ষী শিউলি হিজড়াকে খুনের উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিলে শিউলি উক্ত কোপ ডান হাত দিয়ে ঠেকালে উক্ত কোপ তাহার ডান হাতের কনুইয়ের নিচে লাগিয়া হাড়কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। ২নং আসামী আকাশী হিজড়ার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে শিউলি হিজড়াকে খুন করার উদ্দেশে তাহার পিঠের বাম পাশে কোপ দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। তখন শিউলি হিজড়া সিড়ির পাশে নিচেই পড়িয়া গেলে আসামী আনোয়ারা হিজড়া চাইনিজ কুড়াল দিয়ে শিউলিকে খুন করার উদ্দেশ্যে বামপায়ের হাটুর উপরে কোপ মারিয়া গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে। অজ্ঞাত একজন আসামী হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে শিউলিকে খুন করার উদ্দেশ্যে বামপায়ের নিচে কোপ মারিয়া গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আমরা তখন শিউলিকে রক্ষা করিতে গেলে অজ্ঞাত নামা আসামীরা হাতে থাকা লোহর রডও বাঁশের লাঠি দিয়ে আমাকে ও লতা হিজড়াকে এলোপাতাড়ী ভাবে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি মারিয়া ফোলা ও বেদনাযুক্ত জখম করে। আমি মাটিতে পড়িয়া গেলে আসামী আকাশী হিজড়া আমার হাতে থাকা ভ্যানিটি বাগ হতে ২৬,০০০/ (ছাব্বিশ হাজার) টাকা ছিনিয়া নেয়। আমাদের ডাক চিৎকারে বর্নিত অন্যান্য স্বাক্ষীগনসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে চলিয়া আসিলে আসামীরা মোটর সাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আমরা বিদ্যুতের আলোতে আসামীদের পরিস্কারভাবে চিনিতে পারিয়াছি। তখন স্বাক্ষীগনসহ অন্যান্য লোকজন আমাকেও শিউলি হিজড়াকে উদ্ধার করিয়া একটি ইজিবাইক যোগে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। শিউলি হিজড়ার শারীরিক অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে ভর্তি করিয়া নেন এবং আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়া ছাড়িয়া দেন। তলবমতে ডাক্তারী সনদ পাওয়া যাবে। স্বাক্ষীগন সহ এলাকার বহুলোক ঘটনার বিষয়ে অবগত আছেন। পরের দিন অর্থাৎ ১৯/০১/১৯ তারিখে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করিতে গেলে থানা কতৃপক্ষ মামলা গ্রহন না করিয়া মিমাংশা করিয়া নিতে বলে অথবা আদালতে মামলা করিতে বলে। পরে ঝিনাইদহ জর্জ কোর্টের বিজ্ঞ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতে মামলাটি দায়ের করলে গতকাল সোমবার বিজ্ঞ আদালত দন্ড বিধির ৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/১১৪ ধারা মোতাবেক মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্মকর্তা বরাবর মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।

মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি