রেস্তোরাঁর মান নির্ধারণে বাংলাদেশে চালু হলো গ্রেডিং পদ্ধতি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রেস্তোরাঁর মান নির্ধারণে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করেছে। এ পদ্ধতির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ঢাকার ৫৭টি খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁকে ‘এ+’ ও ‘এ’ গ্রেডের স্টিকার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিজয়নগরের একটি হোটেলে এই গ্রেডিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

গতকাল খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার প্রথমবারের মতো রেস্তোরাঁ মালিকদের হাতে সবুজ ও নীল রঙের স্টিকার তুলে দেন। বিজয়নগরের একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠান হয়। গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসারে সবুজ রঙের অর্থ বেশ ভালো বা উত্তম। আর নীল রঙের অর্থ ভালো। স্টিকারগুলো রেস্তোরাঁর সামনের অংশে টাঙিয়ে রাখার জন্য কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেন এই স্টিকারগুলো দেখে ভোক্তারা রেস্তোরাঁর মান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারে। আর এই স্টিকারগুলোর মেয়াদ থাকবে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক জানান, মান নির্ধারণী গ্রেডিংয়ের জন্য রেস্তোরাঁগুলোর বৈধ কাগজপত্র, বাবুর্চি ও খাবার পরিবেশনকারীদের স্বাস্থ্য সনদ, অনুমোদিত উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ, পারস্পরিক দূষণ (রান্না খাবার ও কাঁচা খাবার একসঙ্গে রাখা), খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি, সাজসজ্জা, পোকামাকড় ও কীট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ও পাইপলাইন ব্যবস্থাপনাসহ মোট ১০টি সূচক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে রান্নাঘরের পরিবেশ সরাসরি দেখতে পারার ব্যবস্থা করা।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব বিচারে কোনো রেস্তোরাঁ ৯০ নম্বরের বেশি পেলে তা হবে ‘এ+’ ক্যাটাগরির, স্টিকারের রং হবে সবুজ। নম্বর ৮০ নম্বরের ওপরে হলে রেস্তোরাঁটি গণ্য হবে ‘এ’ ক্যাটাগরির, থাকবে নীল রঙের স্টিকার। হোটেলের সার্বিক মান ৫৫ থেকে ৭৯–এর মধ্যে হলে এটি গণ্য হবে মোটামুটি মানের রেস্তোরাঁ হিসেবে। এর মান হবে ‘বি’ ক্যাটাগরির, লাগানো থাকবে হলুদ বর্ণের স্টিকার। হলুদ স্টিকারধারী রেস্তোরাঁকে আপাতত তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে তাদের মান ও গ্রেডের উন্নতির জন্য। আর ৪৫ থেকে ৫৪ নম্বর প্রাপ্ত রেস্তোরাঁগুলোতে লাগানো খাকবে কমলা রঙের স্টিকার। এটি হবে ‘সি’ ক্যাটাগরির। যার অর্থ অনিরাপদ। এই রঙের স্টিকারধারী রেস্তোরাঁগুলো যদি এক মাসের মধ্যে সার্বিক সূচকে উন্নতি করতে না পারে, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

‘এ+’ গ্রেডের স্টিকার পেয়েছে ১৮টি রেস্তোরাঁ। আর ‘এ’ গ্রেডের স্টিকার পেয়েছে ৩৯টি রেস্তোরাঁ। সবুজ রঙের স্টিকারপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁগুলো হচ্ছে হোটেল কস্তুরী (পুরানা পল্টন), হান্ডি (পুরানা পল্টন), কিন্নরী (কাকরাইল), আল কাদেরিয়া ক্যাফে (পশ্চিম রামপুরা), ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের দুটি রেস্তোরাঁ (পুরানা পল্টন), এশিয়া হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস (পুরানা পল্টন), কেএফসি (পুরানা পল্টন), ওয়েস্টার্ন রেস্টুরেন্ট (নয়াপল্টন), হোটেল পূর্বাণী (দিলকুশা), বার্গার কিং (বনানী, গুলশান, ভাটারা, যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডি, উত্তরা ও মিরপুর) এবং রাজধানী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট (গুলিস্তান)।

অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার স্টিকারপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁর মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অনেকে এসএসসি-এইচএসসিতে “এ‍+” পেয়ে থাকে। কিন্তু সবাই কি সেটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে? ছোটবেলায় কেউ চিন্তা করে ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু বড় হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। তেমনি আপনাদের যারা “এ+” ও ‘এ’ গ্রেড পেলেন, আমরা আশা করব, সরকারের দেওয়া এই স্বীকৃতিটুকু ধরে রাখবেন। রেস্তোরাঁর মান বজায় রাখবেন।’ একই সঙ্গে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে তিনি উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি পর্যায়ে নজরদারির ওপর জোর দেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সবার সচেতনতার সঙ্গে আত্মশুদ্ধির বিষয়টা জরুরি। আমরা যদি ব্যবসায়িক লোভ সংবরণ করতে না পারি, তাহলে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন হবে। খাবারের মান বজায় রাখার সঙ্গে দামটাও সবার নাগালে রাখতে হবে। অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে হবে।’

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব এম রেজাউল করিম সরকার বলেন, ‘রেস্তোরাঁগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান কেবল ভীতি সঞ্চার করে। কিন্তু কোনো পথ দেখায় না। গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ায় মালিকেরা অন্তত জানলেন, এ অভিযান থেকে বাঁচতে তাঁদের কী কী করতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গ্রেডিং পদ্ধতিকে ‘সময়োপযোগী ও সঠিক’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে পুরান ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোকেও এ পদ্ধতির আওতায় আনার অনুরোধ করেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, কেবল আইন করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত, মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, বিজয় নগর ও সচিবালয় এলাকার ২০০ রেস্তোরাঁর মধ্যে ৫৭টিকে গ্রেডিং দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪৩টি রেস্তেরাঁর কোনটি কোন অবস্থানে তা জানানো হয়নি।