‘যাকে ভালবাসি তাকে বিয়ে করার কোনও অনুমতিও ছিল না’

অনুমতি ছাড়া চাকরি করতে পারতাম না। এমনকি, যাকে ভালবাসি তাকে বিয়ে করার কোনও অনুমতিও ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকম স্বাধীনতা ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রবল মানসিক চাপ এবং অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সৌদি তরুণী রাহাফ মহম্মদ আল-কুনুন। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য তার যাওয়া হয়নি। কানাডায় আশ্রয় হয়েছে ওই তরুণীর।

সৌদি পালানোর পর ধর্মত্যাগ করে কানাডায় আশ্রয় পাওয়ার পর নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন রাহাফ। রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুন নামের এই তরুণী তার নামের শেষাংশ আল কুনুন ফেলে দিয়েছেন। এখন থেকে তার নাম রাহাফ মোহাম্মদ।

মঙ্গলবার কানাডার টরোন্টো শহরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের নাম বদলের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া সৌদি এই তরুণী। ঝুঁকি সত্ত্বেও এত বড় পদক্ষেপ কেন নিয়েছেন ওই তরুণী? কানাডায় পৌঁছে সংবাদমাধ্যমের সামনে সেটাই খোলাসা করলেন তিনি।

কানাডায় পৌঁছানোর পর এক সাক্ষাৎকারে রাহাফ বলেন, বাঁচার জন্য সৌদি আরব ছেড়ে পালিয়ে আসার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমার কাহিনি সেই সকল মহিলাদের সাহসী এবং মুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে শুরু করতে চাই। আমি সৌভাগ্যবতীদের একজন। আমি জানি, সৌদি আরবে অনেক দুর্ভাগা নারী রয়েছেন; যারা পালাতে গিয়ে গুম হয়েছেন অথবা তারা বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কোনো কিছুই করতে পারেননি।

কুয়েতে পারিবারিক ভ্রমণে গিয়ে ১৮ বছর বয়সী এই তরুণী থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান; যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক ঝড় তোলে। পরে ব্যাঙ্ককের একটি হোটেলে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার পর সৌদিতে ফিরে গেলে পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণনাশের শঙ্কা প্রকাশ করে টুইট করতে থাকেন রাহাফ।

টুইটে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং তাকে নির্যাতন করেছেন। শুধু তাই নয় তার সঙ্গে দাসীর ন্যায় আচরণ করা হচ্ছে বলে জানান। তার এই আকুতি অনেক মানবাধিকার কর্মী ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার নজরে আসে। তিনি প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেয়ার চিন্তা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কানাডা এগিয়ে এসে সৌদি এই তরুণীকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দেয়।

রাহাফকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাংককে চলে এসেছিলেন তার বাবা এবং দাদা। যদিও রাহাফের জেদের কাছে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। রাহাফের কানাডায় আশ্রয় পাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গত সোমবার তার পরিবারের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে রাহাফকে মানসিক ভারসাম্যহীন মন্তব্য করে পরিবার তাকে ত্যাজ্য করেছে বলে জানা গেছে।

শনিবার টরোন্টো পৌঁছালে রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুনকে স্বাগত জানান কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। গণমাধ্যমের সামনে তাকে ‘প্রচণ্ড সাহসী নতুন কানাডীয়’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।

এই তরুণীর আশ্রয়, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ধরপাকড় ও মানবাধিকারের রেকর্ড ঘিরে অটোয়া এবং রিয়াদের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ঘিরে প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে সৌদি আরব। এর মাঝেই ধর্ম ত্যাগ করে ওই কিশোরীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে নতুন করে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।

অস্ট্রেলিয়ার একটি সরকারি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাহাফ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি মনে করি সৌদি প্রশাসনের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালানো নারীর সংখ্যা আরো বাড়বে। আমি নিশ্চিত যে, আরো অনেক নারী সৌদি থেকে পালাবেন। আমি আশা করি, আমার এ গল্প এখন থেকে অন্য নারীদের সাহসী এবং স্বাধীন হতে উৎসাহিত করবে।