নিরাপত্তা, গুজব ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ঠেকাতে চলছে কঠোর নজরদারি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন নগরীর প্রায় অর্ধেক মানুষ। শনিবার রাজধানীর অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সড়কে নেই যানজট। ভোট রোববার। ভোটকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার পুলিশ, ১০ হাজার র‍্যাব, এক হাজার ১২৭ প্লাটুন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

সব বাহিনীর সমন্বিত টহলে ঢাকাসহ সারাদেশকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চলছে সাইবার দুনিয়ায়। প্রচারণার সময় শেষ হওয়ায় নেই মাইকিং, মিছিল, স্লোগান, গান-বাজনা। সব মিলে ঢাকা এখন কোলাহলমুক্ত।

তবে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো লক্ষ্য করা গেছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নর্থসাউথ এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। পল্টন, রামপুরা, বাড্ডা ও কাকরাইলে বিচ্ছিন্নভাবে ট্রাফিক ও থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের মোটরসাইকেল জব্দ করতে দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট করে অনেককে তল্লাশি করছে পুলিশ।

এ ছাড়া নির্বাচনী মাঠের পাশাপাশি সাইবার দুনিয়াকে নিশ্ছিদ্র নজরদারির মধ্যে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইসিটি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট, র্যাবসহ প্রতিটি বাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করছেন অনলাইনে। এ কাজে অংশ নিয়েছে জরুরি সেবা ‘৯৯৯’। দেশজুড়ে জরুরি সেবায় বিভিন্ন পোস্টের বিষয়ে তথ্য আসছে ফোনে। সেগুলো জরুরি সেবা থেকে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে স্ব স্ব বিভাগের কাছে। এ ছাড়া নির্বাচনের এই কয়েকদিন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রাখছে পুলিশ। যেকোনো অপ্রীতিকর পোস্ট সম্পর্কে সঙ্গেসঙ্গেই রিপোর্ট করা হবে ফেসবুককে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ব্যাচেলরদের চার দিনের জন্য বাড়ি ছাড়ার গুঞ্জনে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ ভোট দিতে, কেউ চার দিনের ছুটি কাটাতে বাড়ি গেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অধিকাংশ দোকান বন্ধ দেখা গেছে। সব মিলে রাজধানী অনেকটাই থমথমে।

রাজধানীর নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সবধরনের নিরাপত্তা আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে ও গোয়েন্দা তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও স্থাপনায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। বর্তমানে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো। মাঠে অবস্থানের পাশাপাশি সাইবার দুনিয়ায় যেন কেউ কোনো ধরনের গুজব উসকানিমূলক তথ্য না ছড়াতে পারে সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসারের মোট ১৬ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ তিন থেকে পাঁচজন পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ১১ জন ও গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৭ জন ও অস্ত্রসহ চার থেকে ছয়জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবেন ন্যূনতম চারজন।

মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন-চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম দুইজন।