জাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পেলেন সেই ‘বিতর্কিত’ শিক্ষক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন ব্যক্তিগত কাজে ছুটিতে থাকায় এক ‘বিতর্কিত’ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে গত ৫ নভেম্বর সমালোচনা উপেক্ষা করে তাকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে ফিরোজকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়ায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এক সহকারী প্রক্টর অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমান প্রক্টরিয়াল বডির সব শেষ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ফিরোজ। কাজের দিক থেকে তার চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ সহকারী প্রক্টর বর্তমানে বডিতে আছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। ২০১২ সালে ছাত্র-আন্দোলনের মুখে সহকারী প্রক্টর থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ফিরোজ। এছাড়াও ২০১১ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘অভিযোগ’ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে আটকও করেছিল র‌্যাব।

২০১২ সালে ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে নিহত হয় ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহম্মেদ। সে ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। প্রশ্ন ফাঁস এবং সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালনের অবহেলার মত গুরুতর অভিযোগ থাকার পরেও কেন তাকে আবারো ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্রক্টর সিকদার মো জুলকারনাইন এ বছরের শেষের দিকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। আ স ম ফিরোজ-উল-হাসাকে তার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য প্রশাসনের একটি অংশ উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য তড়িঘড়ি করে আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ারও পায়তাঁরা চলছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন বিতর্কিত একজন শিক্ষককে প্রক্টরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হলে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

অভিযোগের বিষয়ে আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, প্রশ্ন ফাসেঁর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্ঠতা নাই। এছাড়া আমি র‌্যাবের তদন্তে এবং সুপ্রীম কোর্টের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। বারবার এসব অভিযোগ এনে আমাকে রাজনৈতিকভাবে অপদস্ত করা হচ্ছে।’

এছাড়া ২০১২ সালে পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জুবায়ের হত্যাকান্ডের পর পুরো প্রক্টরিয়াল টিম পদত্যাগ করেছিলো। কিন্তু বরাবরই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার পদত্যাগকে হাইলাইট্স করা হয়।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোন বক্তব্য দিতে পারবো না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। এই ঘটনায় সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে।’ পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জুবায়ের হত্যাকান্ডের ঘটনায় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির নিজেকে বাঁচাতে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন প্রক্টর। যার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাকে এ দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের দ্বিতীয়বার চিন্তা করা উচিৎ। যে ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ তার কাঁধে নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রদান করাটা হুমকিস্বরূপ। প্রশাসনের উচিৎ যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে এ পদের জন্য নির্বাচন করা।’

উল্লেখ্য, ২০১২সালে সহকারী প্রক্টর হিসেবে পদত্যাগের সময় ফিরোজ-উল-হাসান বর্তমান উপাচার্য বিরোধী অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনুসারী। প্রক্টর হিসেবে ফিরোজের নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্য বিরোধী গ্রুপের শিক্ষকদের কোন আপত্তি নেই।

রুদ্র আজাদ, জাবি প্রতিনিধি